সিলেটে ছাত্রাবাসে ধর্ষণের মামলার আরেক আসামি মাহবুবুর রহমান গ্রেপ্তার
সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণী গণধর্ষণের মামলার আরেক আসামি শাহ মো. মাহবুবুর রহমান ওরফে রনিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৯। রোববার রাত ১০টার দিকে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পৌর শহর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-৯–এর মিডিয়া অফিসার এএসপি ওবাইন রাখাইন প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শায়েস্তাগঞ্জ শহর থেকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মাহবুবুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে সিলেট নিয়ে আসা হচ্ছে।
শাহ মো. মাহবুবুর রহমানের বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাগুনীপাড়া গ্রামে। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে একই সময় মামলার অপর আসামি রবিউল হাসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের একটি দল। এর আগে মাধবপুর থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল পলাতক আসামি অর্জুন লস্করকে গ্রেপ্তার করে।
রবিউলকে গ্রেপ্তার করে সিলেট নিয়ে আসার পথে মুঠোফোনে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, কাজীগঞ্জ বাজারের নিজআগনা গ্রামে এক আত্মীয়র বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন রবিউল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের সমন্বিত অভিযানে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তরুণী ধর্ষণ মামলায় পলাতক ছয় আসামির মধ্যে তিনজনকেই হবিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হলো। মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে গ্রেপ্তার করে ছাতক থানা–পুলিশ।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার প্রথম আলোকে জানান, ছয় আসামির মধ্যে চারজনই ধরা পড়েছেন। বাকি দুই আসামি তারেকুল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমানকে ধরতে অভিযান চলছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত পৌনে আটটা থেকে সাড়ে আটটার দিকে ওই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মোট নয়জনের বিরুদ্ধে ওই তরুণীর স্বামী শাহপরান থানায় মামলা করেছেন। যে ছয়জনের নাম উল্লেখ করেছেন, তাঁরা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত। এই ছয়জন হলেন সাইফুর রহমান (২৮), তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক আহমদ (২৮), শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি (২৫), অর্জুন লস্কর (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুম (২৫)।
এজাহার অনুযায়ী, আসামি সাইফুর রহমানের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জে। তাঁর বর্তমান ঠিকানা এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কের বাংলো। শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনির বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাগুনিপাড়ায়। বর্তমান ঠিকানা ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের ২০৫ নম্বর কক্ষ। মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুমের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামে। রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় জগদল গ্রামে। অর্জুনের বাড়ি জকিগঞ্জের আটগ্রাম। তারেক সুনামগঞ্জ শহরের নিসর্গ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা।
ঘটনার শুরু সিলেটের ১২৮ বছরের পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের ফটকের সামনে থেকে। ফটকটি সিলেট-তামাবিল সড়কের পাশেই। ফটকের ভেতরের মাঠে অনেকে বেড়াতে যান। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই দম্পতিও সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন। রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে স্বামী গিয়েছিলেন সিগারেট কিনতে। ফিরে এসে দেখেন, স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করছেন কয়েকজন তরুণ। স্বামী প্রতিবাদ করলে মারধর করে তাঁদের দুজনকে গাড়িসহ জোর করে তুলে নিয়ে যান ওই তরুণেরা। এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের ভেতরে একেবারে শেষ প্রান্তে নেওয়ার পর স্বামীকে একটা স্থানে আটকে রাখেন তাঁরা। তরুণীকে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। ঘণ্টাখানেক পর স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে দুর্বৃত্তরা এলাকা ত্যাগ করেন। তরুণীর স্বামীর বরাত দিয়ে পুলিশ সাংবাদিকদের এ ঘটনা জানায়।