সিলেটে নৌকার ফল বিপর্যয়

সিলেট বিভাগের অধিকাংশ ইউপিতে আওয়ামী লীগের একাধিক ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ছিল। এ ছাড়া সঠিক প্রার্থী বাছাই না করায় নৌকা হেরেছে।

তৃতীয় ধাপের মতো চতুর্থ ধাপেও সিলেট বিভাগে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ভালো করতে পারেননি। বিভাগের চার জেলার ৮১টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাত্র ৩২টি ইউপিতে জয় পেয়েছেন। হেরে গেছেন বিপরীতে ৪৯টি ইউপিতে। এর আগে তৃতীয় ধাপে ৭৭টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় পেয়েছিলেন ৩১টিতে।

চতুর্থ ধাপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের বিজয়ী ৩২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে হবিগঞ্জে ১১ জন এবং সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে ৭ জন করে মোট ২১ জন রয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ২৬ জন ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান প্রার্থী জয় পেয়েছেন। এর মধ্যে সুনামগঞ্জে ৯ জন, মৌলভীবাজারে ৮ জন, সিলেটে ৫ জন এবং হবিগঞ্জে ৪ জন আছেন।

ফলাফল বিশ্লেষণ করে আরও দেখা গেছে, চতুর্থ ধাপে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিএনপির ১১ জন এবং জামায়াত-সমর্থিত ৪ জন জয় পেয়েছেন। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির ১ জন বিজয়ী হয়েছেন। তবে স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নিয়ে জাপার আরও ১ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এর বাইরে নির্দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৬ জন জয় পেয়েছেন।

নির্বাচনের এই হতাশাজনক ফলাফলের কারণ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, প্রায় ইউপিতেই দলের একাধিক ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ছিলেন। সব প্রার্থীই কমবেশি ভোট টেনেছেন। এটাই পরাজয়ের মূল কারণ। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের অনেকে প্রকাশ্যে না হলেও ভেতরে ভেতরে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছেন। নৌকা প্রতীকের পক্ষে মাঠপর্যায়ের নেতারাও ঐক্যবদ্ধ ছিলেন না। অনেক ইউপিতে আবার যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়েও ভুল ছিল। এসব কারণে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে।

তবে ভরাডুবি নয়, আশানুরূপ ফল আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তিনবারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। এ বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয়ভাবে না এলেও বিএনপির নেতা-কর্মীসহ দল নিরপেক্ষ অনেক ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এটা ইতিবাচক। সাধারণত ইউপি নির্বাচনে ভোটাররা আঞ্চলিকতা, গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব এবং পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেন। চতুর্থ ধাপের নির্বাচনেও সেটা হয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়েও আমাদের কিছু ভুল ছিল। দলীয় প্রার্থীর বাইরে আওয়ামী লীগের প্রচুরসংখ্যক নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও জয় পেয়েছেন।’

ফল বিপর্যয় তিন জেলায়: সিলেটের বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার ২০টি ইউপিতে নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র সাতটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। এ জেলায় আওয়ামী লীগের পাঁচজন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এর বাইরে বিএনপির তিনজন ও জামায়াতের চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পেয়েছেন।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলেন, নির্বাচনে ফল খারাপ হয়েছে, এটা বলা যাবে না। যেসব বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, তাঁরাও আওয়ামী লীগের। আবার কয়েকটি ইউপিতে দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি ‘বিদ্রোহী’ থাকায় উভয়েই হেরেছেন। অথচ তাঁদের প্রাপ্ত ভোট অন্য বিজয়ী প্রার্থীর চেয়ে অনেক বেশি।

সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে ভালো ফল করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। সুনামগঞ্জের দিরাই, বিশ্বম্ভরপুর ও জগন্নাথপুর উপজেলার ২১টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় পেয়েছেন মাত্র ৭টিতে। এ ছাড়ায় ৯টি ইউপিতে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। এ জেলায় বিএনপির ৪ জন নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পেয়েছেন।

মৌলভীবাজারের সদর ও রাজনগর উপজেলার ২০টি ইউপির মধ্যে ৭টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। এ ছাড়া ৮টিতেই জয়ী হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এ জেলায় বিএনপির ৪ জন নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছেন।

ভালো ফল হবিগঞ্জে: তুলনামূলকভাবে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ভালো ফল করেছেন হবিগঞ্জ জেলায়। এ জেলার বানিয়াচং ও লাখাই উপজেলার ২০টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের ১১ প্রার্থী জয় পেয়েছেন। এ ছাড়া দলটির আরও ৪ জন বিদ্রোহী বিজয়ী হয়েছেন। এর বাইরে নির্দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পেয়েছেন ৫ জন।