সিলেট বিএনপিকে ‘নব্য সুবিধাভোগী চক্র’ থেকে রক্ষার আহ্বান
সিলেটে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি গঠনের অসন্তোষ এবার বিএনপি নেতাদের মধ্যে গড়িয়েছে। আজ সোমবার সিলেটে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা হিসেবে পরিচিত কেন্দ্রীয় কমিটির সহক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক পদত্যাগী নেতাদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, বিএনপি ‘বণিকশ্রেণি’ ও ‘নব্য সুবিধাভোগী চক্রের’ হাতে বন্দী। এ অবস্থা থেকে বিএনপিকে রক্ষা করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে রাজ্জাকের সঙ্গে ১৮ আগস্ট পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সহস্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামানের অনুসারী বিএনপির স্থানীয় নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগকারী নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
নগরীর মিরাবাজারে স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রাজ্জাক কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘সিলেট বিএনপি পরিবার আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। যদি কোনো কার্যকরী ফলাফল এবং সুরাহা না করা হয়, তাহলে সিলেট বিএনপি পরিবার যে ক্ষতির সম্মুখীন হবে, তা আর পূরণ করা যাবে না। আমাদের বক্তব্য হলো, চক্ষু বন্ধ করলেও প্রলয় রোধ করা যায় না। আমরা আশা করি, পরিস্থিতির গুরুত্ব আপনারা অনুভব করবেন। তিন–চার বছর ধরে সিলেট বিএনপি পরিবারে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। সিলেট জেলা বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন কমিটি গঠনে অনিয়ম ও অসাংবিধানিক তথা সাধারণ রাজনৈতিক মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে সংগঠনকে ধ্বংস করার এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। ছাত্রদলের গঠনপ্রক্রিয়ায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদলের সদস্যদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আন্দোলন–সংগ্রামে যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল, তাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘যাঁরা রক্ত ও ঘামের বিনিময়ে স্বেচ্ছাসেবক দলকে বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে তৈরি করেছিলেন, তাঁদেরও কমিটি থেকে বাদ দিয়ে বিএনপিতে পদধারী কিছু লোককে কমিটিতে স্থান দেওয়া হলো। ফলশ্রুতিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর ও জেলার বেশির ভাগ নেতা-কর্মী রাগে ও ক্ষোভে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা সেলিম আহমদ, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আহমেদুল হক চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন লস্কর ও ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সুদ্বীপ রঞ্জন সেন, যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মিনহাজ উদ্দিন, সহমুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা কামাল, সদস্য আবদুল গফফার, ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান, জেলা জাসাসের আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হান এইচ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৭ আগস্ট কেন্দ্র থেকে সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল আহাদ খানকে আহ্বায়ক ও দেওয়ান জাকির হোসেন খানকে সদস্যসচিব করে জেলা কমিটি এবং আবদুল ওয়াহিদকে আহ্বায়ক ও আজিজুল হোসেনকে সদস্যসচিব করে মহানগর কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়। দুটো আহ্বায়ক কমিটির মোট সদস্য ১২২ জন।
দুটো কমিটিতে ‘ত্যাগীরা’ স্থান পাননি অভিযোগ তুলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহস্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামান পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে ১৮ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করেন। এরপর ২১ আগস্ট স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটিতে থাকা ১১ জন পদত্যাগ করেন। ২৩ আগস্ট জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের মহানগরের সভাপতি ফয়েজ আহমদ দৌলত, সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল গফফার পদত্যাগ করেন। ২৫ আগস্ট স্বেচ্ছাসেবক দলের ১৫০ জন নেতা একযোগে পদত্যাগ করেন। এরপর ২৭ আগস্ট স্বেচ্ছাসেবক দলের ওয়ার্ড শাখার ৪৯ নেতা পদত্যাগের পর সোমবার এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
বিএনপির ‘নিখোঁজ’ নেতা ইলিয়াস আলীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে সিলেটের রাজনীতিতে পরিচিত সামসুজ্জামান। কেন্দ্রীয় পদে থাকার আগে সিলেট জেলা বিএনপির সহসাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহসভাপতি পদে ছিলেন। বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে তাঁর একটি শক্তিশালী বলয় রয়েছে। এই বলয় ইলিয়াস আলীর অনুসারী হিসেবে সিলেটে পরিচিত।
সোমবারের সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ২৫ আগস্ট সিলেট প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘এ বিষয়ে কেন্দ্রের মহাসচিব থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। মহাসচিব বলেছেন, হাইয়েস্ট ফোরামে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেবেন।’