চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ওঠার পথে পুণ্যার্থীরা
ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আজ সোমবার থেকে শুরু হয়েছে শিবচতুর্দশী মেলা। এ উপলক্ষে তীর্থযাত্রীদের ঢল নেমেছে এখানে। গতকাল রোববার রাত থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা প্রায় সব ট্রেন এবং চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা পাঁচটি ট্রেন সীতাকুণ্ড স্টেশনে দুই মিনিটের জন্য যাত্রাবিরতি করছে। ট্রেনে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত যাত্রী নামছেন সীতাকুণ্ডে।

সীতাকুণ্ড রেলস্টেশনের মাস্টার সৈকত দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে আসা সোনার বাংলা ও সুবর্ণ এক্সপ্রেস ছাড়া সব ট্রেন এবং চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, সাগরিকা এক্সপ্রেস, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, নাসিরাবাদ ও ঢাকা মেইল সীতাকুণ্ড স্টেশনে দুই মিনিটের জন্য থামবে।

মেলা কমিটি জানিয়েছে, গত বছর করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে মেলায় তীর্থযাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। এবার করোনাভাইরাসের প্রভাব কমে যাওয়ায় এবং সরকারি কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় পুণ্যার্থীদের ঢল নেমেছে। তিন দিনের এই আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাঁচটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ওড়ানো হচ্ছে ড্রোন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ছয়টি পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন। চিকিৎসকদের একটি দল এবং পুলিশের প্রায় ৫০০ সদস্য নিরাপত্তার জন্য কাজ করছেন।

কিশোরগঞ্জের নিকলী থেকে আসা লাকি সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ৩০ জন প্রতিবেশীসহ গত শনিবার বিকেলে সীতাকুণ্ডে আসেন একটি বাস রিজার্ভ করে। তিনি উঠেছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। আগামী বুধবার বাসে করে ফিরে যাবেন। খাগড়াছড়ির গুইমারা থেকে আসা রেঞ্জুরা বলেন, তাঁরা চতুর্দশী তিথি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ব্যাসকুণ্ডে পিতৃপুরুষের জন্য তর্পণ করবেন। এরপর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২০০ ফুট ওপরে চন্দ্রনাথ ধামে যাবেন। পরিক্রমা করবেন। আবার পূর্ণিমাতে গয়াকুণ্ডে পিণ্ডদান করার পর চন্দ্রনাথ ধাম পরিক্রমা করবেন। এরপর বাড়ি ফিরবেন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার মন্দির সড়কের দুই পাশে শত শত দোকান বসেছে। মেলায় অস্থায়ী দোকান নিয়ে বসা সুভাষ পালিত প্রথম আলোকে বলেন, এবার তিনি বুট, বাদাম ভাজা, বাতাসাসহ মিষ্টিজাতীয় খাবার বিক্রি করবেন।
মেলা কমিটি সূত্র জানায়, আজ দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের পর শুরু হবে শিবচতুর্দশী তিথি। এই তিথি থাকবে পরের দিন মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটা ৭ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড পর্যন্ত। এরপর অমাবস্যা শুরু হবে। শিবচতুর্দশী ব্রত রেখে পুণ্যার্থীরা প্রথমে স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির, এরপর বিরুপাক্ষ মন্দির ও সর্বশেষ চন্দ্রনাথ মন্দির পরিক্রমা করে ফিরে আসেন। চন্দ্রনাথ মন্দির পরিক্রমা করে ফিরে আসতে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে।

এদিকে খোলা জায়গায় অবস্থান নেওয়া তীর্থযাত্রীদের মধ্যে গতকাল মধ্যরাতে কম্বল বিতরণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন। তিনি মেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ চৌধুরী। ইউএনও বলেন, এবার ১০ লাখ তীর্থযাত্রী এখানে আসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।