সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে ইটভাটা

ইটভাটার মালিক বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আলেয়া পারভিন।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে চলছে ‘এমএম ব্রিকস’ নামের ইটভাটাটি। গত শনিবারছবি: প্রথম আলো

সবুজ মাঠ। সীমানাপ্রাচীরে ঘেরা রঙিন দোতলা ভবন। পরিপাটি সব শ্রেণিকক্ষ। কিন্তু বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। সেখানে কাঠ পুড়িয়ে ইট করা হচ্ছে। ইট ও কাঠ পোড়ানোর উৎকট গন্ধ, কালো ধোঁয়া এবং ধুলাবালুতে চারপাশ ভরে যাওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

এ অবস্থা ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বিদ্যালয়টি ঘেঁষে এমএম ব্রিকস নামে ভাটাটি স্থাপন করা হয়েছে। ইটভাটার মালিক বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলেয়া পারভিন। অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন–২০১৩ অনুযায়ী, বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে।

জেলার সাবেক সিভিল সার্জন ও বক্ষব্যাধি চিকিৎসক আবু মো. খয়রুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধুলাবালুর কারণে শিশুরা হাঁপানি, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা ও অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হতে পারে। ইটভাটার আশপাশের স্কুলের শিশুরা সব সময় এসব রোগে আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকবে। কারণ, শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, আমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা ভবনের দুই পাশ ঘিরে চলছে ইট তৈরির কাজ। পূর্ব দিকে বিদ্যালয় ভবনের ১০০ গজ দূরে ইট পোড়ানোর চিমনি। চিমনির চারদিকে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কাঠ। শ্রমিকেরা সেই কাঠ চুল্লিতে ফেলছেন। রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে মাটি বহনকারী ট্রলি।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একটু বাতাস উঠলেই ইটভাটার ধুলাবালু উড়ে এসে চোখে-মুখে পড়ে। চিমনির কালো ধোঁয়া ও কালিতে শরীর কালো হয়ে যায়। পোড়া গন্ধে পেট ফুলে আসে। শ্রেণিকক্ষে কালির স্তর জমে যায়।

পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা আকবার আলী বলেন, কয়েক দিন আগে মেয়ের চোখ ফুলে পানি পড়তে শুরু করে। সেটার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ে চিকিৎসা নিতে গেলে চিকিৎসক তাঁকে জানান, মেয়ের চোখে ছাই পড়েছিল।

আমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৯ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। বর্তমানে সেখানে ৭৯ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। শিক্ষক আছেন পাঁচজন।

প্রধান শিক্ষক দেওয়ারা বেগম বলেন, ইটভাটাটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাতাস শুরু হলে ইটের গুঁড়া ও ধুলা উড়ে এসে চোখে-মুখে পড়ে। এ কারণে অনেক সময় বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রায়ই বাচ্চারা শরীর খারাপ লাগছে বলে ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যায়। শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, শিক্ষকেরাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ কারণে দিন দিন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।

ইটভাটার মালিক আলেয়া পারভিন বলেন, ‘আমার ভাটায় অনেক বছর ধরে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এত দিন কেউ অভিযোগ করেননি। আর অভিযোগ না থাকায় ধরে নিতে হচ্ছে, ইটভাটার কারণে স্কুলের বাচ্চাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আজমল আজাদ জানান, বিদ্যালয় ঘেঁষে ইটভাটা চলার বিষয়টি নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ নেবেন।

জেলা প্রশাসক মো.মাহবুবুর রহমান বলেন, অবৈধ কোনো ইটভাটাই চলতে দেওয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে অবৈধ সব ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হবে।