বাবুগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা ও টিকা কার্যক্রম ব্যাহত

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার একমাত্র পাকা সড়কটি সুগন্ধা নদীতে বিলীন হওয়ায় সেখানে চারদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ। সোমবার বিকেলে তোলা ছবি
প্রথম আলো

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাতায়াতের একমাত্র পাকা সড়কটির একটি বড় অংশ সুগন্ধা নদীতে আকস্মিক বিলীন হয়ে যাওয়ায় চার দিন ধরে রোগী ও স্বজনেরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। হাসপাতাল থেকে জরুরি রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে নেওয়া যাচ্ছে না। একইভাবে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালের করোনার টিকা কার্যক্রম।

গত শুক্রবার বিকেলে সড়কের প্রায় ৫৪৫ মিটার পাশের সুগন্ধা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। সেদিন থেকেই হাসপাতালের সঙ্গে পুরো এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

আজ সোমবার সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস ভাঙনকবলিত এই সড়ক সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জরুরিভাবে হাসপাতালের সড়ক পুনঃস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশের পরই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালের সড়ক যোগাযোগ সচল করতে ভাঙনকবলিত স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলতে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কাল মঙ্গলবার ঠিকাদার ভাঙনকবলিত স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করবেন।

হাসপাতালের সড়ক বিলীন হওয়ায় চার দিন ধরে কোনো গুরুতর রোগী নিয়ে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স বরিশালে যেতে পারেনি। এ ছাড়া করোনার টিকা নিতে ইচ্ছুক অনেকেই আসতে পারেননি।

পাউবো সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ৫ জুন একই স্থানে নদীভাঙনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটি বিলীন হয়ে যায়। পরে পাউবোর জরুরি রক্ষণাবেক্ষণকাজের আওতায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করা হয়। এতে প্রায় তিন বছর সড়কটি ব্যবহারোপযোগী ছিল।

এদিকে নতুন করে দুর্ভোগে পড়েছেন হাসপাতালে করোনা টিকা নিতে আসা লোকজন। সড়ক নদীতে বিলীন হওয়ায় বিকল্প সড়ক না থাকায় বহু মানুষ টিকা না নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। দক্ষিণ রাকুদিয়া গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেন (৩৮), গৃহবধূ রুবিনা বেগম (২৭), রহমতপুর বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আর মামুন (২৮)—তাঁদের সবারই টিকা গ্রহণের নির্ধারিত তারিখ ছিল সোমবার। কিন্তু হাসপাতালের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তাঁরা টিকা নিতে যেতে পারেননি। এ রকম অনেকেই গত চার দিনে টিকা নিতে হাসপাতালে আসতে পারেননি।

বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুভাস সরকার প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের সড়ক বিলীন হওয়ায় চার দিন ধরে কোনো গুরুতর রোগী নিয়ে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স বরিশালে যেতে পারেনি। এ ছাড়া করোনার টিকা নিতে ইচ্ছুক অনেকেই আসতে পারেননি বলে তিনি স্বীকার করেন।

এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিনই সুগন্ধার বুকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীতীরবর্তী বসতবাড়ি, ফসলি জমিসহ বহু স্থাপনা। ইতিমধ্যে উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের চরসাধুকাঠি, বাহেরচর ঘোষকাঠি, উত্তর রাকুদিয়াসহ নদীসংলগ্ন গ্রামের বহু ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সুগন্ধার অব্যাহত ভাঙনে বহু পরিবার তাদের শেষ আশ্রয়টুকু হারিয়ে এখন নিঃস্ব।

এলাকাবাসী আরও বলেন, বাবুগঞ্জ উপজেলার নদীতীরবর্তী গ্রামগুলো সন্ধ্যা, সুগন্ধা, আড়িয়াল খাঁ—এই তিন নদীর ভাঙনের কবল থেকে কিছুতেই রক্ষা করা যাচ্ছে না। একে একে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রবল আকার ধারণ করেছে নদীভাঙন। গত এক মাসে নদীতীরবর্তী এলাকার ভাঙনে বিলীন হয়েছে অনেক পরিবারের বসতভিটা।

বাহেরচর এলাকার বাসিন্দা মহিবুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনে প্রবল নদীভাঙনের ফলে দেহেরগতি ইউনিয়নের বাহেরচর, ঘোষকাঠি গ্রামের একাধিক বাড়ি-বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া ঝুঁকিতে রয়েছে ২৬ নম্বর বাহেরচর-ঘোষকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্থানীয় মসজিদসহ বহু ঘরবাড়ি।