সুনামগঞ্জের ১২ ইউপিতে ২৩ বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় নৌকার প্রার্থীরা

ইউপি নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

চতুর্থ ধাপে সুনামগঞ্জের দিরাই ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৬ ডিসেম্বর। এই ১৪ ইউপির ১২টিতেই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আছেন। এসব বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন দলীয় প্রার্থীরা।

দলীয় নির্দেশনা না মেনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইতিমধ্যে দিরাই উপজেলায় চারজনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার একটি ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় যুবলীগের এক নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু যাঁরা মূল দলের কোনো পদে নেই বা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে আছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে সুনামগঞ্জ সদর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউপির মধ্যে মাত্র দুটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী জয় পান। এর মধ্যে সদর উপজেলার নয়টি ইউপির সবগুলোতেই হেরেছেন নৌকার প্রার্থী। এই ভরাডুবির পেছনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মূল ভূমিকা ছিল বলে দলের ভেতর-বাইরে আলোচনা চলছে।

বিশ্বম্ভরপুরের ৫ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩০ জন। এর মধ্যো চার ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন ছয়জন। এ ছাড়া তিনটিতে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী আছেন। ফলে এসব ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিদ্রোহীদের পাশাপাশি জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের চাপেও আছেন।

দিরাই উপজেলার নয়টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫৩ জন। এর মধ্যে ৮টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন ১৭ জন। তবে এ উপজেলার কোনো ইউপিতেই জাতীয় পার্টির দলীয় কোনো প্রার্থী নেই।

প্রায় প্রতিটি ইউপিতেই বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এতে নির্বাচনে জয় পাওয়া কঠিন হবে বলে মনে করছেন দলীয় প্রার্থীরা।

বিশ্বম্ভরপুরের ধনপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন হযরত আলী। তিনি বলেন, ‘দল ক্ষমতায় আছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছি, উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছি। কিন্তু এখন নির্বাচনে নিজের দলের লোকের সঙ্গেই লড়াই করতে হচ্ছে। কিছু লোক তো বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গেও আছেন। মূলত দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় পরিশ্রম করতে হচ্ছে বেশি। বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলে জয় সহজ হতো।’

একই উপজেলার পলাশ ইউপির আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল আলম সিদ্দিকী বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে চাপে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত হওয়ার পরও এবার অনেকে নৌকার প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন। আবার দলের অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদধারী ব্যক্তিরা দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এরা দলের লোক হয়ে দলের ক্ষতি করছেন। এসব বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলার নেতাদের কাছে দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির ইমন বলেন, বিদ্রোহীদের বিষয়ে দল কঠোর অবস্থানে আছে। গত নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, বিদ্রোহীদের কারণে অনেক ইউপিতেই দলের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। যাঁরা দলের পদে থেকে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের বহিস্কার করা হয়েছে। তবে যাঁরা পদে নেই অথচ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, নৌকার পরাজয়ে ভূমিকা রাখছেন, ভবিষ্যতে তাঁরা দলে কোনো পদ পাবেন না।