সুনামগঞ্জে বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন নিয়ে যায় তরুণের দল

সুনামগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত এক রোগীকে অক্সিজেন দিচ্ছেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে করোনা সংক্রমিত রোগীদের প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন একদল তরুণ। মুঠোফোনে কল করলেই তাৎক্ষণিক অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হন তাঁরা, সেটা দিন হোক বা গভীর রাত। এই তরুণেরা সবাই স্বেচ্ছাসেবী। কেউ শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিকর্মী আবার কেউবা গণমাধ্যমকর্মী।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে সম্প্রতি করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে জেলা সদর হাসপাতালে করোনা ইউনিটে বাড়ছে রোগীর চাপ। এতে করে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন চাহিদাও বাড়ছে। যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হন, তাঁদের প্রয়োজনে সিলিন্ডারে অক্সিজেন দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট, হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা, আইসিইউ নেই। তবে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত আছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাঁদের অক্সিজেন প্রয়োজন হলে ওই স্বেচ্ছাসেবীরা সেটি পৌঁছে দেন। দুটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সুনামগঞ্জে বিনা মূল্যে করোনা রোগীদের এই অক্সিজেন সেবা দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই থেকে শহরে বিনা মূল্যে করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন সেবা শুরু করেছে জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। তাদের যুব ও তরুণ কর্মীরাই মূলত বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়ে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার কাজটি করে থাকেন।

সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এমদাদুল হক শাহজাহান বলেন, এ পর্যন্ত তাঁরা ৩১ জনকে সেবা দিয়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অথবা ব্যবস্থাপত্র দেখেই রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া হয়। তাঁদের ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবী পালাক্রমে এই কাজ করেন। এ জন্য তাঁরা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। দিন-রাতের যেকোনো সময় দরকার হলে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রোগীর বাড়িতে হাজির হন তাঁরা। আগে সিলেট থেকে এসব সিলিন্ডার রিফিল করে আনতে হতো, এখন সুনামগঞ্জেই করা যায়। এতে সুবিধা হয়েছে।

এই প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবী সুনামগঞ্জ প্রথম আলো বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘এই মানবিক কাজে যুক্ত থাকতে পেরে খুব ভালো লাগছে। যাঁরা যুক্ত, সবাই আন্তরিক এবং উৎসাহ নিয়ে কাজটি করছেন।’

জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান পীর বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম, সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, সহায়তা প্রদান, অ্যাম্বুলেন্স সেবাসহ নানাভাবে কাজ করছি। এসব কাজে মূল ভূমিকা রাখছেন তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা। এখন অক্সিজেন সেবা দেওয়া হচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকবে।’

এই সংগঠনের পাশাপাশি ৫ আগস্ট থেকে একইভাবে শহরে করোনা রোগীদের বিনা মূল্যে অক্সিজেন সেবা দেওয়া হচ্ছে সুনামগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘সুনামকণ্ঠ’ পত্রিকার উদ্যোগে। পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. জিয়াউল হক এই সেবা কার্যক্রমের পুরো ব্যয় বহন করছেন। ২১টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও পাঁচটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর নিয়ে তাঁরা এই কার্যক্রম শুরু করেছেন। তাঁদের ৩০ জন তরুণ স্বেচ্ছাসেবী আছেন। যাঁরা মানুষের বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যান। ২৪ ঘণ্টা সেবা দিচ্ছেন তাঁরা।

মো. জিয়াউল হক বলেন, বাবার ডায়ালাইসিস করাতে সপ্তাহে দুই দিন তাঁকে সিলেটে নিয়ে যান তিনি। সেখানে করোনায় আক্রান্ত মানুষের কষ্ট দেখেছেন। একজনকে দেখেছেন অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে। এতে তিনি খুব কষ্ট পান এবং সিদ্ধান্ত নেন সুনামগঞ্জে বিনা মূল্যে করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন সেবা চালুর।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টিআইবির সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি আইনজীবী আইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্যোগটি সুনামগঞ্জের জন্য জরুরি ছিল। উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ। বিশেষ করে এর সঙ্গে যুক্ত শহরের পরিচিত তরুণদের যখন দেখি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন; তখন মনে শক্তি পাই, ভালো লাগে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি এসব উদ্যোগ করোনায় সংকটে পড়া মানুষদের সাহস জোগাবে।’