সেই কুলসুম আর নেই, শেষবেলায় পেলেন ছেলের হাতের ছোঁয়া
আগলে রাখা স্বামী চতুর আলী আর সন্তানদের মায়া ছেড়ে শেষ পর্যন্ত চিরবিদায় নিলেন সেই কুলসুম বেগম (৫৫)। আজ শুক্রবার রাত ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে তিনি কুষ্টিয়া করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তবে মারা যাওয়ার দুদিন আগে তিনি ছেলে জিয়াউর রহমানকে কাছে পেয়েছিলেন।
কুলসুম ও চতুর আলীর বাড়ি কুষ্টিয়া কুমারখালী সদকী ইউনিয়নের বানিয়াকান্দি এলাকায়। পরিবারে তিন মেয়ে ও এক ছেলে। তিন মেয়ে এখন স্বামীর বাড়িতে থাকেন। একমাত্র ছেলে থাকেন ঢাকায়। গত শুক্রবার কুলসুম করোনা পজিটিভ হন। শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন চতুর আলী। কুষ্টিয়া করোনা হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ নম্বর কক্ষের এক শয্যায় ঠাঁই হয় কুলসুম বেগমের। বিপদের এই সময়ে সন্তানদের কাউকে পাশে পাচ্ছিলেন না। তাই হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে স্ত্রীর পাশে একাই ছিলেন চতুর আলী।
এ অবস্থা নিয়ে গত মঙ্গলবার ‘মুমূর্ষু স্ত্রীর পাশে অসহায় এক স্বামী’ শিরোনামে প্রথম আলো অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে লকডাউনের মধ্যেই ঢাকায় এক বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করা একমাত্র ছেলে জিয়াউর রহমান গত বুধবার রাতে ছুটে আসেন। থাকেন মায়ের পাশে। তবে সেটা আর বেশি দিন হলো না।
আজ রাতে কুলসুম বেগম স্বামী-সন্তানের মায়া ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেলেন না–ফেরার দেশে। রাতে করোনা ওয়ার্ড থেকে লাশ বের করার সময় কাঁদছিলেন ছেলে জিয়াউর রহমান। তবে স্বামী চতুর আলী যেন নির্বাক হয়েছিলেন। কোমরে শক্ত করে বাঁধা গামছা। আর হাতে পাটি ও প্লাস্টিকের টুল নিয়ে বের হচ্ছিলেন। কিন্তু মনটা বেদনায় ভরা।
ছেলে জিয়াউর রহমান বলেন, মায়ের কাছে ছুটে এসেও সুস্থ করে বাড়ি নিতে পারলেন না। নিথর দেহ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে। রাতেই নিজেদের গ্রামে লাশ দাফন করবেন বলে জানান তিনি।