রাজশাহীর বাগমারা
সেতু দখল করে খড় ইটের খোয়ার ব্যবসা
প্রতিবাদ করলেই দখলকারীরা হুমকি-ধমকি দিয়ে থামিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার একটি সেতু দখল করে চলছে খড় ও ইটের খোয়ার ব্যবসা। এর পাশাপাশি নির্মাণসামগ্রী রেখেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি সেতুতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর সেতুটির নির্মাণকাজ চার বছর আগে শেষ করে। পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুর সুবিধা যখনই স্থানীয় বাসিন্দারা পেতে শুরু করেছেন, তখন থেকেই শুরু হয় দখলবাজদের উৎপাত। সেতু খালি করে যানবাহন চলাচলের স্থান উন্মুক্ত করে দিতে যখনই কথা বলতে গেছেন, দখলকারী ব্যক্তিরা তাঁদের হুমকি-ধমকি দিয়ে থামিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সেতুটি উপজেলার কাচারীকোয়ালীপাড়ার পীরগঞ্জে ফকিন্নী নদীর ওপরে নির্মিত। উপজেলার পশ্চিম এলাকার সোনাডাঙ্গা, বাসুপাড়া, নরদাশ, গোবিন্দপাড়া ও আউচপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দাদের পূর্ব ও উত্তর এলাকাসহ উপজেলা সদরের সঙ্গে সহজ যোগাযোগে সেতুটির গুরুত্ব অপরিসীম। সেতুর উভয় পাশে ডজনখানেক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা রয়েছে। সেতুটি নির্মাণের আগে সেখানে নৌকা দিয়ে লোকজনকে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হতো।
তবে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরই স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি সেতুর বিশাল অংশ দখলে নেন। তাঁরা সেখানে কেউ খড়, কেউ ইটের খোয়া রেখে বিক্রি করা শুরু করেন। সেতুর সামান্য কিছু অংশ ফাঁকা রাখা হয়েছে। ওই অংশ দিয়ে কোনোরকমে চলাচল করতে হয় লোকজনকে। বড় কোনো যানবাহন সেতু পার হতে গেলেই যানজট লাগে। কেবল পায়ে হেঁটে, বাইক বা বাইসাইকেল নিয়ে বাধাহীনভাবে পার হওয়া যায়।
৮ এপ্রিল সরেজমিনে সেতু এলাকায় দখলের চিত্র দেখা গেছে। এ সময় কথা হয় আশপাশের লোকজনের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, তাঁরা একাধিকবার দখলদারদের বারণ করে উল্টো হুমকির শিকার হয়েছেন। প্রায় চার বছর ধরে সেতু দখল করে খড়ের ব্যবসা চালাচ্ছেন দ্বীপপুর ইউনিয়নের লাউবাড়িয়া গ্রামের প্রভাবশালী আবদুল খালেক ও অজ্ঞাতপরিচয় আরেক ব্যক্তি। প্রতিদিন পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয় খড়ের পালা। সেখান থেকে বিক্রি করা হয় খড়। সারা বছর চলে এ ব্যবসা। এ ছাড়া দুই বছর ধরে সেতুতে লাউবাড়িয়া গ্রামের আরেক প্রভাবশালী এছলাম আলী খোয়ার ব্যবসা শুরু করেছেন। দলীয় কোনো পদ না থাকলেও তাঁরা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক এবং গ্রামে আগে থেকেই প্রভাবশালী।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল খালেক খড় রেখে ব্যবসার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, সেতুর এক পাশে ফাঁকা থাকার কারণে এসব সামগ্রী রেখেছেন। এসব রাখার কারণে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেউ রাখতেও বারণ করেনি বলে তিনি জানান।
এছলাম আলী বলেন, কিছুদিনের জন্য এগুলো রাখা হয়েছে। সময়মতো সরিয়ে নেবেন। তবে কবে সরিয়ে নেবেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক সুফিয়ান বলেন, তিনিও বিষয়টি জানেন না। তাঁকে জানানোও হয়নি। তাঁদের অপসারণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।