সৌদি আরবে গিয়ে প্রতারণার শিকার মোহনগঞ্জের শরীফ

প্রতীকী ছবি

দালালের মাধ্যমে সৌদি আরবে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন নেত্রকোনার মো. শরীফ উদ্দিন (৩২) নামের এক যুবক। সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর থেকে তাঁকে ঠিকমতো বেতন দেওয়া হচ্ছে না। উল্টো তাঁকে কয়েক দফা বিক্রি করা হয়েছে বলে শরীফের পরিবার অভিযোগ করেছে। ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল ও খুদে বার্তার মাধ্যমে প্রতারিত হওয়ার বিষয়গুলো তিনি পরিবারকে জানিয়েছেন।

শরীফ উদ্দিন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌর শহরের কাজিহাটি গ্রামের মৃত. আবদুল মোতালিবের ছেলে। শরীফের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শরীফ উদ্দিন এইচএসসি পাস করে মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে অস্থায়ী একটি চাকরি করতেন। সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর তিনি ঢাকার বনানী এলাকার তেজারা ওভারসিজ লিমিটেড নামের একটি ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে যান।

ওই ট্রাভেল এজেন্সির স্থানীয় প্রতিনিধি সোহেল রানা। তিনি মোহনগঞ্জ উপজেলার সুয়াইর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। সোহেলের মাধ্যমে ওই এজেন্সির খোঁজ পান শরীফ। পরে শরীফ সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য সোহেল রানাকে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেন। আর পাসপোর্টসহ অন্যান্য খরচ মিলে তাঁর মোট খরচ হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

শরীফ উদ্দিনের স্ত্রী আইরিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদেশে পাঠানোর সময় মেম্বার সোহেল রানা বলেছিলেন, সেখানে একটি ভালো কোম্পানিতে চাকরি দিবেন। অফিসে ক্লিনারের কাজ দিবেন। কিন্তু তাঁর সব ওয়াদা মিথ্যা।’
আইরিন আক্তার বলেন, সৌদিতে যাওয়ার পর তাঁর স্বামী শরীফকে প্রথমে আবহা এলাকায় আজাদ নামের কুমিল্লার এক ব্যক্তির কাছে পাঠানো হয়। আজাদ তাঁকে বিক্রি করে দেন নোয়াখালীর লিটন মিয়া নামের অন্য একজনের কাছে। লিটন মিয়া তাঁকে ‘ইমাত তাহালান’ নামের একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেন। ওই কোম্পানিতে দুই মাস কাজ করার পর এক টাকাও বেতন দেয়নি তাঁকে। শুধু খাওয়ার খরচ দেওয়া হয়েছে। বেতনের পুরো টাকা লিটন নিয়ে যান। এসব কথা বেশ কয়েকবার ফোনে সোহেল রানাকে জানানো হলে সোহেল তাঁকে কাজ না করার পরামর্শ দেন। সোহেল রানার পরামর্শমতো কাজ বন্ধ করলে কোম্পানির মালিক তাঁকে কাজ থেকে বের করে দেন।

আইরিন আক্তার বলেন, ‘দুই সন্তান নিয়ে এখন অনেক চিন্তায় আছি। ঋণ করে বিদেশে গেছে। এখন পাওনাদারেরা চাপ দিচ্ছে। খাওয়ার টাকাই জুটাতে পারছি না, ঋণ দেব কেমন করে? মেম্বারের এমন প্রতারণার বিচার চাই।’

শরীফ বর্তমানে জেদ্দায় এক বাংলাদেশির আশ্রয়ে আছেন। সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপে শরীফের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশে যাওয়ার সময় তাঁকে ধারদেনা করতে হয়েছে। আত্মীয়স্বজন ছাড়াও প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে তিনি দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। সোহেল রানার খপ্পরে পড়ে তিনি এখন দিশাহারা। তাঁর হাতে কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। যেকোনো সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।

শরীফ বলেন, ‘একদিকে কাজের বেতন নাই, অন্যদিকে দেশে ঋণের চাপ—সব মিলিয়ে আমি চোখে অন্ধকার দেখছি। শুধু আমি একা নই, মোহনগঞ্জেরর ভাটি সুয়াইর গ্রামের জোবায়ের হোসেন, সাগর, শাহ আলমসহ আমাদের চারজনকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছে সোহেল মেম্বার। তাঁদেরও একই দুরবস্থা।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সোহেল রানা বলেন, ‘আমি তেজারা ওভারসিজ লিমিটেডে একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে কাজ করি। শরীফের সঙ্গে আমার বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। তাঁর বেতন তুলে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। কোম্পানিকে বেতনের চাপ দেওয়ার জন্য তাঁকে চাকরি ছাড়তে বলেছিলাম। এখন আবার জয়েন করতে বলছি, কিন্তু শরীফ জয়েন করছে না। শরীফের যেন লোকশান না হয়, সব সময় সেই চেষ্টা করেছি। বিদেশে যাওয়ার সময় জমি বিক্রি করতে চেয়েছিল, আমি জমি বিক্রির পরিবর্তে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দিয়েছি। আমার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নেই। একটু সময় দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তার সঙ্গে অন্য যাদের বিদেশ পাঠানো হয়েছে, তারা ভালো আছে। শুধু শরীফের একটু সমস্যা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে মোহনগঞ্জ থানার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদুল হাসান বলেন, এ নিয়ে থানায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।