স্বজনদের কাছে ফিরলেন ভারতে আটক হওয়া ছয় বাংলাদেশি
ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক হওয়া ছয় বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সহযোগিতায় এই ছয়জনকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে একটায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়া সীমান্তের চেকপোস্ট দিয়ে তাঁরা বাংলাদেশে ফেরেন। আখাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমানা আক্তার বলেন, দেশে ফেরা ওই ছয়জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এই ছয়জনের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও তিনজন নারী। এর মধ্যে একজন কিশোরী রয়েছে। তাঁরা হলেন বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার জিয়ারুল ইসলাম (৩০), জামালপুরের মানিক মিয়া (৩০), মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার মো. শাহাজান মিয়া (২০), ঢাকার কেরানীগঞ্জের এক নারী (৩৫), কিশোরগঞ্জ সদরের এক নারী (৩৫) এবং ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার এক কিশোরী (১৬)।
সকাল ১০টায় আখাউড়া সীমান্তের শূন্যরেখায় তাঁদের গ্রহণ করার সময় ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার মোহাম্মদ জুবায়েদ হোসেন, প্রথম সচিব মো. রেজাউল হক ও এস এম আসাদুজ্জামান, ইউএনও রোমানা আক্তার, ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান, স্বেচ্ছাসেবক সৈয়দ খায়রুল আলম এবং ভারত থেকে ফেরত আসা ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি সূত্র জানায়, ভারত থেকে ফেরা ছয় বাংলাদেশিই মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ত্রিপুরায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হতে আটক হন। পরে আদালতের নির্দেশে আগরতলার মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কয়েকজন এই হাসপাতালে চার থেকে পাঁচ বছর বা আরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর তাঁদের দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই হাসপাতালে পাচারের শিকার আরও অনেক বাংলাদেশি আছেন বলে জানা গেছে।
এই ছয়জনের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও তিনজন নারী। এর মধ্যে একজন কিশোরী রয়েছে। তাঁরা ছয়জনই মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ত্রিপুরায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হতে আটক হন।
শাহাজাহানের বাবা মানিক মিয়া ও মামাতো ভাই রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সালের মার্চে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে শাহাজাহানের মামা ফখরু মিয়া রাতে ঘর থেকে শাহাজানকে তুলে নিয়ে যান। পরে শাহাজাহানের বাম কান ও ডান হাত বিচ্ছিন্ন করে এবং পেটে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে চাতলা সীমান্তে ফেলে দেন। পরে বিএসএফের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে সেখানকার হাসপাতালে ভর্তি করান। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর খোঁজ পায় পরিবার।
জিয়ারুলের স্বজন মোহাম্মদ রাজ্জাক বলেন, ২০১৪ সালে তাঁর স্ত্রীর ভগ্নিপতি জিয়ারুল নিখোঁজ হন। তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। এমন একজন মানুষ কীভাবে ভারতে গেলেন, সেটা নিয়ে তাঁরা বিস্মিত।
কিশোরীর চাচাতো ভাই বলেন, ১০ বছর আগে হঠাৎ একদিন তাঁদের বোন নিখোঁজ হয়। অনেক পরে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারেন, সে আগরতলায় মানসিক হাসপাতালে আছে। কিন্তু কীভাবে আগরতলায় গেল, তাঁরা তা বুঝতে পারছেন না।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা আজ দেশে ফিরেছেন, তাঁরা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পৌঁছালেন কীভাবে, তা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। সীমান্ত থেকে তাঁদের বাড়ি অনেক দূরে অবস্থিত। তাঁদের পক্ষে একা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যাওয়া সম্ভব না। এখানে পাচারকারী একটি চক্র সক্রিয় আছে। চক্রটিকে খুঁজে বের করতে হবে।
ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের মোহাম্মদ জুবায়েদ হোসেন বলেন, যাঁরা ফিরেছেন, তাঁরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাঁরা কিছুই স্মরণ করতে পারছেন না। কীভাবে তাঁরা সেখানে পৌঁছালেন, সেটিও তাঁদের মনে নেই। পাচারের বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকেও সুনির্দিষ্ট তেমন কোনো অভিযোগ নেই।