ঈদের দিন দুপুরে চট্টগ্রামের স্বাধীনতা পার্ক ছিল প্রায় ফাঁকা। ঈদের নামাজ ও আনন্দ উদ্‌যাপনে তখনো সবাই ব্যস্ত। এমন সময় রৌফাবাদ থেকে পার্কের সামনে এসে দাঁড়ায় তিনটি বাস। গাড়ি থেকে নেমে আসে একদল শিশু-কিশোর। তারা নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কোলাকুলিতে। আয়োজক পক্ষ ও পার্কের লোকদের সঙ্গেও কোলাকুলি করতে ভোলেনি তারা। তাদের জন্য তৈরি করা মঞ্চের সামনে সবাই হাজির হতেই শব্দযন্ত্রে বেজে ওঠে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত গান ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ। তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।’ এতে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের জন্ম হয় সেখানে। এই গানের সুরে সুরে প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে নাচতে থাকে শিশু-কিশোরেরা। তাদের কেউ কেউ উন্মুক্ত উদ্যানে ঘুরতে থাকে। কেউ কেউ চড়ে বসে বিভিন্ন ধরনের দোলনায়। তাদের এই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে উপস্থিত বয়োজ্যেষ্ঠদের চোখে দেখা দেয় আনন্দাশ্রু।

এভাবে ঈদ উদ্‌যাপনের সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বাসিত রাবেয়া বেগম বলে, ‘আমরা তো প্রতিবছর ঈদে ঘরে (সরকারি শিশু পরিবার প্রাঙ্গণে) সময় কাটাই। এবারই প্রথম এ রকম বাইরে ঈদ করার সুযোগ পেয়েছি।’

শারমিন আক্তার নামের এক কিশোরী বলে, ‘এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। সবাই মিলে অনেক আনন্দ করছি। অনেক নতুন কিছু জেনেছি। এ রকম সুযোগ তো আমাদের জীবনে আসে না।’ কিবরিয়া মাহমুদ নামের এক শিশু বলে, ‘এখানে এসে অনেক জায়গায় ঘুরেছি। খেলাধুলা করেছি।’

শিশু-কিশোরদের আনন্দ উপভোগ স্পর্শ করেছে প্রতিষ্ঠানের কর্তাদেরও। মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতিষ্ঠানের উপপরিচালক আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর ঈদে ক্যাম্পাসে কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এবারই বাইরে ঈদ উদ্‌যাপনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে ছেলেমেয়েরা খুব উপভোগ করছে। তারা গানের সুরে নাচ করছে, হাততালি দিচ্ছে। ঈদের যে আনন্দ, এটা তারা প্রকাশ করতে পেরেছে।

অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে শিশু-কিশোরদের নিয়ে কেক কাটেন আয়োজনের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মকর্তারা। পরম মমতায় সে কেক খাইয়ে দেন তাঁরা।
ঈদ উদ্‌যাপনের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরা চারদেয়ালে বন্দী অবস্থায় ঈদ করে। এবার মনে হলো তাদের সঙ্গে ঈদ করি। এক দিনের জন্য হলেও বাইরে নিয়ে আসি। ছেলেমেয়েদের খুশি দেখে নিজের খুব ভালো লাগছে। কান্নাও পেয়েছে।’