স্লুইস গেট ভেঙে বাঁধের ৩০০ ফুট বিলীন, সড়ক ভেঙে যান চলাচল বন্ধ
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হালদা নদীর শাখা চেংখালী খালের মুখে পাহাড়ি ঢলের পানিতে স্লুইস গেট ভেঙে বেড়িবাঁধের প্রায় ৩০০ ফুট বিলীন হয়ে গেছে। বেড়িবাঁধের ওপর তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সত্তারঘাট-অংকুরিঘোনা গড়দোয়ারা সড়ক। বাঁধে ভাঙনের ফলে সড়কের স্থানে স্থানে ফাটল ধরেছে এবং একাংশ খালে বিলীন হয়ে গেছে।
বর্তমানে সড়কটি দিয়ে যানবাহন ও মানুষের চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে হাটহাজারী ও রাউজান দুই উপজেলার তিন ইউনিয়ন এবং পৌরসভার একটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
সপ্তাহখানেক ধরে স্লুইস গেট, বেড়িবাঁধ ও সড়ক ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে হাটহাজারীর গড়দোয়ারা, মেখল ও ফতেহপুর ইউনিয়ন এবং রাউজানের ১ নম্বর ওয়ার্ডের অংকুরিঘোনা গ্রামের প্রায় দেড় শ হেক্টর জমির ফসল ও লোকালয়।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, প্রায় ১৫০ হেক্টর জমির ফসল ইতিমধ্যে নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া সত্তারঘাট-অংকুরিঘোনা গড়দোয়ারা সড়ক বিলীন হওয়ার কারণে ৭–৮টি স্কুল ও মাদ্রাসার প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীকে বিকল্প পথে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় তিন মাস আগে চেংখালী খালের মুখ এলাকায় স্লুইস গেটের ওপর সড়কের মধ্যে একটি গর্ত তৈরি হয়। পরে সেটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে স্লুইস গেটসহ সড়কের ২০০ থেকে ৩০০ ফুট এলাকা খালে বিলীন হয়ে যায়। গত এক সপ্তাহে কয়েকবারের বৃষ্টিতে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের পানি চেংখালী খালে ঢুকে শত শত বাড়িঘর ও ফসলের খেত প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ঢলের পানিতে কয়েক কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েক দিন আগে স্থানীয় ব্যক্তিরা একটি বাঁশ ও গাছের সাঁকো তৈরি করেছিলেন খাল পার হওয়ার জন্য। কিন্তু ঢলে সেটিও তলিয়ে গেছে। এ কারণে সত্তারঘাট-অংকুরিঘোনা গড়দোয়ারা সড়ক দিয়ে যানবাহন ও লোকজনের চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, ১৯৮০ সালে চেংখালী খালে বেড়িবাঁধ ও স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে বেড়িবাঁধের ওপর সত্তারঘাট-অংকুরিঘোনা গড়দোয়ারা সড়ক দিয়ে জিপ, ট্রাক, অটোরিকশা চলাচল করত।
স্থানীয় কৃষক আবদুল নবী প্রথম আলোকে বলেন, স্লুইস গেট ও সড়ক ভেঙে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় তাঁরা এখন দিশাহারা। সামনের বর্ষায় ওই এলাকার বিলে কোনো ফসলই ফলানো যাবে না। ঢলে সব শেষ করে দেবে।
ওই সড়ক দিয়ে রোজ স্কুলে আসা-যাওয়া করতেন গড়দোয়ারা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক রত্না বড়ুয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন স্কুলে যেতে-আসতে আট কিলোমিটার ঘুরতে হয়।
হাটহাজারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন সিকদার বলেন, স্লুইস গেট ও বেড়িবাঁধ বিলীন হওয়ায় প্রায় ১৫০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এই হিসাব প্রাথমিক। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
বর্ষা শেষ হলে ওই স্থানে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাঙামাটি পৌর সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী চয়ন কুমার ত্রিপুরা।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখানে নতুন স্লুইস গেট করতে গেলে ২০–২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দরকার। আবার সামনে বর্ষা এবং নদীতে মা–মাছের প্রজনন মৌসুম। তাই এখন এখানে নতুন কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া যাবে না। কারণ, বর্ষায় এখানে স্লুইস গেট বা বিকল্প কোনো কাজ করা সম্ভব নয়। করলেও তা টিকবে না।