বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত
সড়ক একমুখী, কোথাও যানজটে পড়তে হচ্ছে না
এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক শুক্রবার থেকে একমুখী করে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও যানজট নেই। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত দুই লেনের সড়কটি একমুখী করে দেওয়া হয়েছে। ফলে দুই লেনের ওই সড়কে চার লেনের মতো সুবিধা পাচ্ছে যানবাহনগুলো।
বঙ্গবন্ধু সেতু টোল প্লাজা সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে মোট ৪২ হাজার ১৯৯টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের দিকে গেছে ২৫ হাজার ৭৮১টি যানবাহন। আর উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকার দিকে পার হয়েছে ১৬ হাজার ৪১৮টি। এর আগে বুধবার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৭৩৪টি যানবাহন সেতু পারাপার হয়।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই মহাসড়কের টাঙ্গাইল শহর বাইপাস, কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়ক ও সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কোথাও যানজট নেই। প্রচুর যানবাহন যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু সেতুর দিকে। ঢাকা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন সড়ক ধরে যানবাহন আসতে পারে। তারপর দুই লেন সড়কে প্রবেশ করতে গিয়ে অন্যবার ঈদের আগে যানজটের সৃষ্টি হয়। এবার এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক শুক্রবার থেকে একমুখী করে দেওয়া হয়েছে। দুই লেনের এ সড়কটি দিয়ে শুধু উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন চলাচল করছে। ফলে দুই লেনের সড়ক হলেও চার লেনের মতোই সুবিধা পাচ্ছে। অপর দিকে ঢাকামুখী যানবাহন সেতু পার হওয়ার পর বিকল্প সড়কে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা আসছে।
সেতুর গোলচত্বর এলাকায় কথা হয় রাজশাহীগামী ব্যক্তিগত গাড়ির আরোহী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এবার ঢাকা থেকে রওনা হয়ে কোথাও যানজটে পড়তে হয়নি। শুধু সেতুর টোল প্লাজার কাছে এসে লাইনে পড়তে হয়েছে। বগুড়াগামী বাসের চালক কোরবান আলী বলেন, এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত সড়ক একমুখী করায় যানজটে পড়তে হচ্ছে না।
মির্জাপুরের গোড়াই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুল হক বলেন, মহাসড়কের মির্জাপুর অংশসহ চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত কোনো জট নেই। গতকাল বিকেলে পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা উত্তরাঞ্চলমুখী হয়েছেন। তারপরও রাস্তা স্বাভাবিক রয়েছে। ঈদের আগে আর যানজট হওয়ার আশঙ্কা নেই।
এলেঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আতাউর রহমান বলেন, মহাসড়কে যানজট নেই। স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করছে। শনিবারের পর থেকে যানবাহনের চাপ আরও কমবে।
ট্রেনে চালকের কক্ষেও যাত্রী
বিকেল সোয়া চারটায় বঙ্গবন্ধু সেতু রেলসংযোগ সড়কের মির্জাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায় মানুষের ভিড়। রাজশাহীগামী ঢাকা কমিউটার ট্রেনে চেপে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঈদে বাড়ি ফিরছেন। কেউ ট্রেনের ছাদে, কেউ ঝুলে, কেউ চালকের কক্ষে, আবার কেউ ইঞ্জিনের দুই পাশে বসেছেন। নারী-পুরুষ কোনো ভেদাভেদ ছিল না। ট্রেনের চালকের কক্ষেও ছিলেন অনেক যাত্রী। চালক বলেন, ‘কিছুই করার নেই। সবাই বাড়িতে ঈদ করবে। এ জন্যই আমার কক্ষেও যাত্রীরা ঢুকে পড়েছেন।’
২৪ ঘণ্টায় সেতুতে ৮ হাজার মোটরসাইকেল
ঈদকে সামনে রেখে এবার বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে রেকর্ডসংখ্যক মোটরসাইকেল পারাপার হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ৭ হাজার ৯৫৯টি মোটরসাইকেল পারাপার হয়েছে। এর আগে বুধবার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ৫ হাজার ২২৭টি মোটরসাইকেল সেতু পারাপার হয়।
মোটরসাইকেলের আরোহীরা জানান, যানজট হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে না থেকে মোটরসাইকেলে গন্তব্যে যাওয়া অনেক সহজ হয়। তাই কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও ঈদের ছুটিতে অনেকেই এবার বাড়ি যাচ্ছেন মোটরসাইকেলে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল প্লাজা সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪২ হাজার ১৯৯টি যানবাহন সেতু পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ দশমিক ৮৬ ভাগ ছিল মোটরসাইকেল। ১৯৯৮ সালের জুনে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর এত বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল এর আগে এক দিনে পারাপার হয়নি।