কুষ্টিয়ার কুমারখালী
সড়ক ভেঙে সেতুর কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদার
ঠিকাদারের কোনো খোঁজ নেই। এখন জনগণের ভোগান্তির শেষ নেই। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ।
নতুন সেতু নির্মাণের জন্য পুরোনো ছোট সেতুর পাশের সড়ক ভেঙে ফেলা হয়েছে। পাশেই মাটি দিয়ে করা হয়েছে নতুন সড়ক। এরপর কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখন নানা কারণ দেখিয়ে কাজ শুরু করছে না তারা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। যানবাহন নিয়ে এ সড়কে চলতে গিয়ে পড়ছেন বিপাকে।
সেতুটি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার লালন বাজার-পান্টি বাজার সড়কের ঐতিহ্যবাহী পান্টি বাজারের ডাকুয়া নদীর ওপর অবস্থিত। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, সেতু থেকে সড়ক বিচ্ছিন্ন করে সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদার। মাটি দিয়ে কোনোমতে বিকল্প কাঁচা সড়ক নির্মাণ করে ঠিকাদারের আর কোনো খোঁজ নেই। এখন জনগণের ভোগান্তির শেষ নেই। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ।
তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, বেশ কিছু কারণে কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। কয়েক দিন পর আবার কাজ শুরু করবেন।
কুমারখালী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, পান্টি বাজার এলাকায় ডাকুয়া নদীর ওপর প্রায় ৮১ মিটার দীর্ঘ পিএসসি গার্ডার সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। ৬ কোটি ৭২ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ পায় ডন-রুমানা জেভি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুয়ায়ী ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট কাজ শুরু হয়ে শেষ করার কথা রয়েছে চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৬ মার্চ সেতু নির্মাণের জন্য বিকল্প সড়কের কাজ শুরু করে। এ জন্য পুরোনো ছোট সেতুর পাশের সড়ক ভেঙে সেতু থেকে সড়ক বিচ্ছিন্ন করে রাখে।
স্থানীয় লোকজন জানান, ডাকুয়া নদীর দুই পাড় ঘেঁষে ঐতিহ্যবাহী পান্টি বাজার। উপজেলার সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ততম এই বাজার। উপজেলার চাঁদপুর, বাগুলাট, পান্টি ও যদুবয়রা ইউনিয়নের প্রায় লাখো মানুষ এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এ ছাড়া পাশের ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা কুষ্টিয়া শহরে যেতে এ সড়ক ব্যবহার করেন। গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি নতুন করে নির্মাণের জন্য সড়ক কেটে ফেলে রাখায় চরম ভোগান্তি বেড়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সেতু থেকে পাকা সড়কটি কেটে বিচ্ছিন্ন করা। পাশে নদীর ভেতরে একটা বিকল্প মাটির সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে নেই কোনো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড। নেই দুর্ঘটনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা। ঠিকাদার, শ্রমিক ও প্রকৌশল কার্যালয়ের কাউকে দেখা যায়নি। চরম ভোগান্তিতে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ ও যানবাহন।
স্থানীয় বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, বাজারের জন্য সেতুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেতু নির্মাণের কথা বলে সড়ক কেটে রাখা হয়েছে। কিন্তু কাজের খোঁজ নেই। এখন ভোগান্তির শেষ নেই।
পান্টি বাজারের ব্যবসায়ী আজম খান বলেন, চলাচলের জন্য যে রাস্তা করেছে, তা দিয়ে এখনই চলাচল করা কষ্টকর। বাজারের মালামাল আনতে গিয়ে চরম সমস্যা হচ্ছে। শুক্রবার সাপ্তাহিক হাট। মানুষ ও আর যানবাহনের চাপ বেশি। বৃষ্টি হলে চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে।
সেতু এলাকাতেই চা বিক্রি করেন মোতালেব আলী। তিনি বলেন, শুক্রবার সাপ্তাহিক হাটে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে সেতু দিয়ে। কিন্তু ঠিকাদার সড়ক কেটে কাজ না করে পালিয়েছেন। এখন মানুষের দুর্ভোগ দেখার লোক নেই।
পান্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান বলেন, ‘পান্টি ঐতিহ্যবাহী ও পুরোনো বাজার। সেতুর কাজ জনগণের চরম ভোগান্তি বাড়িয়েছে। আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।’
জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রুমানার মালিক ফারুক হোসেন বলেন, ‘সেতু এলাকায় দুটি বিদ্যুতের খুঁটি পড়েছে। সেগুলো সরানো গেলে কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া কয়েক দিন আগে পান্টি এলাকায় মারামারি হয়েছে। এ কারণে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা বর্তমান বাজারে সব ধরনের নির্মাণসামগ্রীর দাম খুবই চড়া। এতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। জানি না সামনে কী অপেক্ষা করছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আবদুর রহিম বলেন, সেতু নির্মাণের জন্য বিকল্প সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু সেতু ভাঙা বা সেতু থেকে সড়ক বিচ্ছিন্নতার বিষয়ে জানা নেই। সেতু দ্রুত নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।