সড়ক সম্প্রসারণে অনিয়মের অভিযোগ স্বপ্রণোদিত হয়ে আমলে নিলেন আদালত
নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক সম্প্রসারণ কাজের শর্ত ভঙ্গ করে সড়কের পাশে গর্ত খুঁড়ে মাটি তুলে সরকারি সড়কের ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ আমলে নিয়েছেন নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদ। আজ রোববার ওই আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগটি আমলে নেন।
আদালত ৩০ জুনের মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বিশেষ পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দুর্নীতির বিষয়ে জেলা পর্যায়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এ ধরনের আইনি পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সর্বমোট ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
নাটোরের একটি আদালত সূত্রে জানা যায়, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০(১)(সি) ধারার ক্ষমতাবলে রোববার একটি বিবিধ মামলার নথি খোলেন। নথিতে উল্লেখ করেন, ৪ এপ্রিল প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘ঠিকাদারের সাশ্রয়ে সরকারি টাকা গচ্চা’ ও একাত্তর টিভির ‘সড়কের মাটি কেটেই সড়ক প্রশস্ত’ শিরোনামে প্রচারিত প্রতিবেদন দুটি আদালতের নজরে এসেছে।
প্রতিবেদন দুটি বিশ্লেষণ করে আদালতের কাছে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে, নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের (এন-৫০২) সম্প্রসারণ কাজে ঠিকাদারের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অন্য স্থান থেকে মাটি আনার কথা। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সড়কের পাশে গর্ত খুঁড়ে মাটি তুলেছে এবং সরকারি সড়কের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিসাধন করেছে, যা দণ্ডবিধির ৪৩১ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ছাড়া ঠিকাদারেরা কার্যাদেশের শর্ত লঙ্ঘন করে সরকারি অর্থ আত্মসাত করার জন্য সড়ক ও জনপথ তথা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা করেছেন, যা দণ্ডবিধির ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় দণ্ডনীয় অপরাধ।
আদালত তাঁর আদেশে অপরাধ কাদের দিয়ে সংঘটিত হচ্ছে, তা প্রাথমিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে শনাক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন পিবিআইকে। তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তকালে আসামিদের শনাক্তকরণ, সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ, ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র প্রস্তুত, প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সমস্ত কাগজ জব্দ ও সরকারি রাস্তার পাশ থেকে কত ঘনফুট মাটি তোলা হয়েছে এবং তাতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরুপণ করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
একই সঙ্গে আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রথম আলো ও একাত্তর টেলিভিশনের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের জবানবন্দি গ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তকাজে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী (সওজ) নাটোরকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশের অনুলিপি জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী প্রকৌশলীর (সওজ) কাছে পাঠানো হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নাটোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিম রোববার বিকেলে বলেন, ‘আদালতের আদেশের কপি পেয়েছি। অভিযোগটি আমার বিবেচনায় ফৌজদারি কোনো অপরাধ বলে মনে হয়নি। ঠিকাদার চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করলে তাঁর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাবে। তদন্ত হোক।’
এ বিষয়ে পিবিআই নাটোরের বিশেষ পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘রোববার দুপুরে আদেশের কপি পেয়েছি। আদালতের নির্দেশমতো তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’