হতদরিদ্র নুরজাহান বেগমের সংসার আর চলছে না

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার নুরজাহান বেগম
ছবি: প্রথম আলো

নুরজাহান বেগম (৬৫) সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা খাত থেকে মাসে ৫০০ টাকা বিধবা ভাতা পান। নিশ্চিত আয় বলতে এটুকুই। শরীর ঠিক থাকলে বাসাবাড়িতে কাজ করে কিছু টাকাপয়সা আসে। কিন্তু ভাতা আর কাজের আয় দিয়ে হতদরিদ্র নুরজাহান বেগম সংসার চালাতে পারছেন না। ভর্তুকি মূল্যে পণ্য কেনার জন্য পারিবারিক পরিচিত কার্ডও তাঁর ভাগ্যে জোটেনি।

নুরজাহান বেগম ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের চামটা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই গ্রামের মৃত আবদুল মজিদের স্ত্রী। তাঁর পুত্রসন্তান নেই। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ে তাঁর স্বামীর সঙ্গে থাকেন। নুরজাহান বেগম বাড়িতে একা থাকেন।

গত মাসে নুরজাহান বেগম তিন মাসের ভাতা একসঙ্গে পেয়েছেন। সামনে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। তাই প্রাপ্ত ভাতার অর্ধেকের বেশি টাকা খরচ করে থাকার ঘরটি মেরামত করেছেন। এ ছাড়া কিছু ঋণ ছিল, তা–ও পরিশোধ করেছেন। হাতে কিছু টাকা রয়েছে ওষুধ কেনার জন্য।

নুরজাহান বেগম বলেন, আগে শরীরে শক্তি ছিল। বাসাবাড়িতে কাজ করতে পারতেন। এখন সেই জোর পান না। তারপরও ক্ষুদা নিবারণের জন্য মাঝেমধ্যে পরিচিত বাসাগুলোতে যান। ঘর মোছা, তরি-তরকারি কেটে দিয়ে গৃহিণীদের কাছ থেকে এটা-সেটা চেয়ে আনেন। এভাবেও দিন চলে না নুরজাহান বেগমের। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নুরজাহান বেগমের কানা হিসাব মিলছে না।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ভাতা গ্রহণের বার্তা জানার জন্য নুরজাহান বেগমের একটি মুঠোফোন রয়েছে। আজ রোববার সকালে ওই মুঠোফোনে কল করে ফ্যামিলি কার্ড পেয়েছেন কি না, তা জানতে চাইলে নুরজাহান বলেন, বিধবা ভাতার কার্ড ছাড়া তাঁর আর কোনো কার্ড নেই। নতুন করে কোনো কার্ড পাননি। করোনার সময়ে তিনি এক প্যাকেট চাল-ডাল পেয়েছিলেন। এরপর আর তিনি কিছু পাননি।

হতাশ কণ্ঠে নুরজাহান বেগম বলেন, মাছ খেতে পান না অনেক দিন ধরে। শাক আর ভাত খেতে হচ্ছে। সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইচ্ছা থাকলেও যখন-তখন বাজার থেকে তেল কিনতে পারেন না। তাই মাঝেমধ্যে তেল ছাড়া শাক ভাজার চেষ্টা করেন। বিস্বাদ লাগলেও তা-ই খেতে হচ্ছে।

হতদরিদ্র নুরজাহান বেগমের ফ্যামিলি কার্ড না পাওয়ার বিষয়ে খোঁজ নিতে আজ দুপুরে উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোছা. তাসলিমা আক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে কল কেটে দেন।

গতকাল শনিবার নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল মনসুর তাঁর কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নান্দাইল উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ২৩ হাজার ২৮৫ জন নিম্ন আয়ের মানুষকে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হয়েছে। করোনাকালে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এককালীন আড়াই হাজার টাকার সহায়তা যাঁরা পেয়েছেন ও সামাজিক নিরাপত্তা খাত থেকে ভাতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের এই তালিকায় রাখা হয়েছে।