নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় এক নারী ও তাঁর দুই সন্তানের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে নিহত নারীর ভাই মো. মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে বেলাব থানায় মামলাটি করেন। তবে এ ঘটনায় ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হত্যার দায় স্বীকার করা গৃহকর্তা গিয়াস উদ্দিন শেখকে মামলার আসামি করা হয়নি। আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের বাড়ি থেকে লাশ তিনটি উদ্ধার করা হয়। নিহত তিনজন হলেন গিয়াস উদ্দিন শেখের স্ত্রী রাহিমা বেগম (৩৫) এবং তাঁদের দুই সন্তান রাব্বি শেখ (১৩) ও রাকিবা শেখ (৭)। রাহিমা বেগম এলাকায় দরজি হিসেবে পরিচিত। রাব্বি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ঝরে পড়া ছাত্র ও রাকিবা স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
এর আগে গতকাল লাশ উদ্ধারের চার ঘণ্টা পর নিহত নারীর স্বামী ও দুই শিশুর বাবা গিয়াস উদ্দিন শেখকে আটক করে পিবিআই। ঘটনার সময় তিনি গাজীপুরে অবস্থান করছিলেন বলা হলেও তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর ট্র্যাক করে ঘটনাস্থলে থাকার সত্যতা পাওয়ার পরপরই তাঁকে আটক করা হয়। পরে তিনি পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষ বর্ণনা দেন। ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রী ও সন্তানদের উপর্যুপরি পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি। পরে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও ব্যাট উদ্ধার করে পিবিআই। কিন্তু থানায় করা মামলায় গিয়াস উদ্দিন শেখকে আসামি করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে জেলা ও থানা–পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো পুলিশি তদন্ত চলছে। কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাঁদের নাম তদন্তেই বেরিয়ে আসবে। পিবিআইও এ ঘটনায় নিজেদের মতো তদন্ত করছে। তারা যদি প্রমাণ করতে পারে গিয়াস উদ্দিন শেখই তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করেছেন, তবে তাঁকেও এই মামলায় আসামি করা হবে।
পিবিআই বলছে, লাশ উদ্ধারের সময় ডিবি, র্যাব, সিআইডি, পিবিআই ও পুলিশ কর্মকর্তারা যাঁর যাঁর মতো তদন্ত করছিলেন। গিয়াস উদ্দিন শেখ ওই সময় সবাইকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছিলেন। কিন্তু তাঁকে খুবই নির্বিকার লাগছিল। এতটাই স্বাভাবিক ছিলেন যে প্রথমে তাঁকে কোনো সন্দেহ হয়নি। আটকের পর জেরার মুখে তিনি মৌখিকভাবে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
পিবিআই আরও জানায়, আটকের পর গিয়াস উদ্দিন শেখের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী, ওই রাতে তিনি গোপনে বাড়িতে আসেন। স্ত্রী রাহিমা বেগমের কক্ষে ঢুকে একটি ক্রিকেটের ব্যাট দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁকে উপর্যুপরি পেটান। পরে পা ধরে তাঁকে টেনে মেঝেতে ফেলে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন তিনি। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর পাশের ঘরে গিয়ে ঘুমন্ত দুই সন্তানের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ওই ব্যাট দিয়ে উপর্যুপরি পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে দুই ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে রেখে তিনি পালিয়ে যান।
গিয়াস উদ্দিন শেখকে আসামি না করার বিষয়ে মামলার বাদী মো. মোশারফ হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। অত কিছু বুঝি না। পুলিশ আমাকে যেভাবে মামলা করতে বলেছে, সেভাবেই মামলা করেছি। আপনার কিছু জানার থাকলে পুলিশকে জিজ্ঞাসা করুন।’
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান প্রথম আলোকে বলেন, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন নিহত রাহিমার ছোট ভাই মো. মোশারফ হোসেন। বাদী যেভাবে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, সেভাবেই মামলা নেওয়া হয়েছে। মামলায় কাদের আসামি করা হবে, তা ঠিক করেন বাদী। তিনি কাকে আসামি করবেন, এটা তাঁর ব্যাপার। পুলিশি তদন্ত শেষে প্রকৃত আসামিদের মামলায় অন্তর্ভুক্ত দেখানো হবে।