হত্যার পর একাই লাশ চার খণ্ড করেন আশরাফ: পুলিশ
মাগুরায় মো. আজিজুর রহমান (৩০) নামের এক যুবককে হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। সেখানে মো. আশরাফ আলী (৩২) নামের এক যুবককে একমাত্র আসামি করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ জুন মাগুরা সদর উপজেলার সংকোচখালী গ্রামের যুবক মো. আজিজুর রহমান খুন হন। হত্যার পর একাই লাশ চার খণ্ড করেন আশরাফ আলী। পরদিন মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কালুকান্দি গ্রামের একটি রাস্তার পাশে ও মজাপুকুর থেকে দুটি বস্তায় মোড়ানো মাথাবিহীন দেহের খণ্ডিত দুটি অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। কয়েক দিন পর সদর উপজেলার ঘোড়ানাস গ্রামে রাস্তার পাশ থেকে ওই যুবকের খণ্ডিত পা ও মাথা উদ্ধার করে র্যাব।
এ ঘটনায় ৬ জুন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মহম্মদপুর থানায় হত্যা ও লাশ গুমের মামলা করেন নিহত যুবকের ভাই মো. হাবিবুর রহমান।
সিআইডি বলছে, ওই মামলায় একমাত্র আসামি সদর উপজেলার মালিগ্রামের বাসিন্দা মো. আশরাফ আলী। তিনি শহরের পারলা বেলতলা এলাকায় হিজামা অ্যান্ড হোমিও সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে হোমিও চিকিৎসক (কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সনদ নেই) হিসেবে কাজ করতেন। ৫ জুন দুপুরে প্রতিষ্ঠানেই খুনের ঘটনা ঘটে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হিউম্যান গ্রোথের কাজে লাগে, এমন একটি বায়ো স্প্রে বিক্রি করতেন আজিজুর। ওই স্প্রে বিক্রির সূত্র ধরেই দুজনের পরিচয়। স্প্রে বিক্রির কমিশন হিসেবে আজিজুরের কাছে তিন হাজার টাকা পেতেন আশরাফ। ঘটনার দিন ৩ হাজারের জায়গায় ৫০০ টাকা দিতে গেলে আজিজুরের ওপর ক্ষুব্ধ হন আশরাফ। আজিজুরকে কানে–মুখে চড় দিলে তিনি পড়ে গিয়ে অচেতন হয়ে যান। এরপর টয়লেটে নিয়ে গিয়ে আজিজুরের মাথায় পানি দেন আশরাফ। এ সময় আশরাফ বুঝতে পারেন, আজিজুরের হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে ফেলে রেখে শহর থেকে ছুরি, দড়ি ও পলিথিন কিনে আনেন আশরাফ। হিজামা অ্যান্ড হোমিও সেন্টারের মধ্যে ওই ছুরি দিয়ে আজিজুরকে চার খণ্ড করেন তিনি। বিকেল ও সন্ধ্যায় লাশের খণ্ডগুলো বস্তায় ভরে দুই দফায় মোটরসাইকেল ও ভ্যানে করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেন আশরাফ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা সিআইডির পরিদর্শক নিকুঞ্জ কুমার কুন্ডু প্রথম আলোকে বলেন, হত্যার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন আসামি। তদন্তেও পাওয়া গেছে, তিনি একাই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি। নিহত যুবকের ব্যবহৃত মুঠোফোন ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা গেছে। আসামি এখন কারাগারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিহত আশরাফের স্ত্রী আফরোজা খাতুন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাই সুষ্ঠু বিচার হোক। আসামির শাস্তি হোক। আর কীই–বা চাওয়ার আছে।’