‘হলগুলোতে নৈরাজ্য আমরাও পছন্দ করি না’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক
ছবি: প্রথম আলো

করোনার পর গত বছরের ১৭ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খোলার পর ছাত্রলীগ আসন দখলের জন্য হলে তালা মারতে শুরু করে। এরপর বৈধভাবে হলে ওঠা শিক্ষার্থীদের নানা কায়দায় হলছাড়া করে। হল থেকে শিক্ষার্থীদের বিতাড়িত করতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠছে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসেও শিক্ষক-অভিভাবক, শিক্ষার্থীরা সরব হচ্ছেন। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়েছেন বিশ্বদ্যিালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর রাজশাহী প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম

প্রশ্ন :

করোনার পর গত বছর আবাসিক হল খোলার পর থেকে ছাত্র হলে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে বের করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে আপনারা কতটুকু অবগত আছেন?

আসাবুল হক: আমাদের কাছেও এ বিষয়গুলো নিয়ে অভিযোগ এসেছে। আবার পত্রপত্রিকাতেও আসছে। এ বিষয়গুলো সমাধান করারও চেষ্টা হচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ তাঁদের হল প্রশাসন নিয়ে এ বিষয়ে তৎপর হয়েছেন। এ বিষয়ে সমাধানের উপায় চাইলে আমরাও পরামর্শ দিচ্ছি।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

সম্প্রতি নবাব আবদুল লতিফ হলে গভীর রাতে এক শিক্ষার্থীকে গালিগালাজ ও মারধর করে হলছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া আরও অনেক ঘটনা আছে। এগুলোর শাস্তি কী?

আসাবুল হক: এ ধরনের ঘটনা ঘটার পর আমরা প্রথমেই প্রাধ্যক্ষকে জানাই যে আপনার হলে এ ধরনের বিষয় শোনা যাচ্ছে। প্রাধ্যক্ষদের একটি হলকেন্দ্রিক আইনকানুন রয়েছে। সে অনুযায়ী তাঁরা কিন্তু ব্যবস্থা নিতে পারেন। কয়েক দিন আগে লতিফ হলে এ ধরনের ঘটনার পর আমি গিয়েছিলাম। সেখানে আরও কয়েকজন শিক্ষক এসেছিলেন। সেখানে আলাপ হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রাধ্যক্ষ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ ছাড়া প্রাধ্যক্ষ পরিষদও ঘন ঘন এ বিষয়গুলো নিয়ে জরুরি সভা করছেন। আর এ ধরনের ঘটনা ঘটার পর অনেক সময় নিজেরাই সমাধান করে ফেলেন। তখন আর অভিযোগ থাকে না। আর যদি এটা নিয়ে তদন্ত হয়, তখন প্রতিবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে আসে। তখন বিভিন্ন মেয়াদের একজন শিক্ষার্থীর শাস্তি হয়।

প্রশ্ন :

হলের গেটে তালা, কক্ষে তালা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। এমনকি প্রাধ্যক্ষেরাও লাঞ্ছিত হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত পদক্ষেপ কতটুকু?

আসাবুল হক: এ নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার অবগত আছেন। তিনিও বারবার আমাদের বলছেন বিষয়গুলো সমাধান করার। যাঁরা সমস্যা সৃষ্টি করছেন, তাঁরাও ছাত্র, আবার যাঁরা ভুক্তভোগী তাঁরাও ছাত্র। এখানে কোনো ছাত্রসংগঠন হিসেবে দেখছি না। আমরা দেখছি, সবাই আমাদের ছাত্র। এসব ঘটনায় তদন্তও চলছে।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

অনেক হলে সিট খালির তুলনায় সেখানে অনাবাসিক শিক্ষার্থীই বেশি। আবার এমন অভিযোগও রয়েছে, তাঁদের টাকার বিনিময়ে একটি ছাত্রলীগ তুলেছে। এই নেতাদের অনেকের ছাত্রত্বও শেষ।

আসাবুল হক: যাঁরা জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী, তাঁদের ওঠার বিষয়ে অগ্রাধিকার রয়েছে। এর বাইরে অনেকে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না–ও হতে পারেন। এ ছাড়া ছাত্রসংগঠনগুলোরও দাবিদাওয়া থাকতে পারে। এখানে অবশ্যই প্রাধ্যক্ষের মাধ্যমে উঠতে হবে। কারণ, ওই সংশ্লিষ্ট হলের সব দায়িত্ব প্রাধ্যক্ষের। অনেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী রয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে প্রাধ্যক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। করোনার কারণে হলের এই সমস্যাগুলো বেশি হয়েছে। দেখা গেছে, আগের প্রশাসনও এগুলোকে সেভাবে নজর দিতে পারেনি। আর সিট–বাণিজ্যের কথা এমনিতেই শুনেছেন। এ বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থী বা প্রাধ্যক্ষ কখনো বলেননি। আর ছাত্রত্ব নেই এমন কেউও হলে থাকতে পারবেন না।

আবাসিক হলগুলোতে সিটবাণিজ্য, হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও নিপীড়ন এবং শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন সাধারণ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে
ফাইল ছবি

প্রশ্ন :

সম্প্রতি আপনাদের সরব দেখা যাচ্ছে। কয়েকটি জরুরি সভাও করেছেন। এক কর্মীকে হল থেকে শুধু সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। সামনে কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন? চ্যালেঞ্জ কতটুকু? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কতটুকু হল প্রশাসনেকে সাহায্য করছে?

আসাবুল হক: হলগুলোতে নৈরাজ্য আমরাও পছন্দ করি না। প্রাধ্যক্ষরাও করেন না। আর এই বিষয়গুলো এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। হলগুলোকে কোনো ছাত্রসংগঠন হয়তো বলছে, এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। বর্তমানে হলগুলোতে বেশকিছু জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক প্রাধ্যক্ষ হিসেবে যোগাদান করেছেন। এই অধ্যাপকরা নিজেদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হচ্ছেন। এত দিন হলগুলোতে লাঞ্ছিত হওয়াসহ কোনো টুঁ শব্দ হয়নি। তার মানে এখন হচ্ছে কেন? তার মানে প্রাধ্যক্ষেরা দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছেন। তাঁরা লাঞ্ছিত হওয়ার মতো ঘটনা নিয়ে মুখ খুলছেন। এ কারণে এই বাধাগুলো আসছে, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটছে। আগে হয়তো ওভাবে প্রাধ্যক্ষরা সরব ছিলেন না। এ কারণে এই বিষয়গুলো উঠে আসেনি।
করোনার কারণে অনেকেই আগ্রাসী হয়ে উঠেছেন। এ কারণে আমরা চাইছি, এ বিষয়ে ক্লাসগুলোতে যেন একজন শিক্ষক কথা বলেন। এ ছাড়া আমরাসহ হল প্রাধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করছেন, এখন সরব হয়েছেন। আশা করছি এ বিষয়টি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

প্রথম আলো: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আসাবুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন