হাওরের নদী খননে আসন্ন বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখার দাবি
প্রতিবছর অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হাওর রক্ষা বাঁধের পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। এর বদলে নদী রক্ষা বাঁধের জন্য মেগা প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। এটা হলে অকালবন্যায় ফসলহানি থেকে স্থায়ীভাবে হাওরের কৃষকেরা মুক্তি পাবেন। তাই হাওরের নদী খননের জন্য আসন্ন বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা দরকার।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা একটায় সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (ইমজা) সম্মেলনকক্ষে ‘হাওরবাসীর বাজেট প্রত্যাশা’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা।
সভায় বক্তব্য দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুনতাহা রাকিব এবং আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কাসমির রেজা। তাঁরা প্রস্তাবিত বাজেটে হাওরের জন্য আলাদা একটি অধ্যায় সন্নিবেশন করার দাবি জানান। এ সময় আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পিযুষ পুরকায়স্থ টিটু উপস্থিত ছিলেন।
সভায় অকালবন্যা থেকে রক্ষা পেতে হাওর এলাকার নদী এবং কিছু বিল খননের জন্য ৫ বছর মেয়াদি ২০ হাজার কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প প্রণয়ন এবং এর অংশ হিসেবে আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
মতবিনিময় সভায় আয়োজকেরা বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে দুর্যোগপ্রবণ হাওর এলাকার কৃষকদের জন্য শস্যবিমা চালু করা, ধান-চাল সংরক্ষণের জন্য হাওরে পর্যাপ্ত পরিমাণ গুদাম নির্মাণ, পরিকল্পিত ডেইরি ফার্ম ও হাঁস পালনের ওপর জোর দেওয়া, হাওরের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অধিক হারে বৃক্ষরোপণ, বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমাতে বজ্র নিরোধক দণ্ড বসানো, গভীর হাওরে আশ্রয় গৃহ তৈরি, হাওর এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো এবং ছাত্রছাত্রীদের চলাচলের জন্য আলাদা নৌকার ব্যবস্থা করা।
সভায় একটি লিখিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, চলতি বছর দুই দফা বন্যায় হাওরাঞ্চলে অন্তত ৫০ হাজার পরিবার ফসলহানির শিকার হয়েছে। এসব পরিবারের মানুষ সারা বছরের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন এই বোরো ফসল হারিয়ে এখন দিশাহারা। হাওরের ফসল হারানো পরিবারগুলোকে ২০১৭ সালে বছরজুড়ে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা করে প্রদান করা হয়। এ বছরও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে বড় ধরনের সহযোগিতা করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে আগামী মৌসুমে তাঁদের বিনা মূল্যে সার ও বীজ প্রদান করা দরকার। এ জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ থাকতে হবে।
লিখিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হাওর এলাকার উন্নয়নে সরকারের বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প পরিকল্পনাধীন আছে। কিন্তু এসব প্রকল্পের অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ থেকে ধর্মপাশার পথে হাওরে উড়াল সেতু প্রকল্প, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প, সুনামগঞ্জে সীমান্ত সড়ক প্রকল্প, স্থায়ী ক্লোজার নির্মাণ প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। এসব প্রকল্পের জন্য এবারের বাজেটে বরাদ্দ প্রয়োজন। এ ছাড়া হাওরের বিলগুলোর ইজারার টাকা কমিয়ে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের বিল দখলে রাখার ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী চলমান অস্থিরতায় সরকার স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে কৃষির ওপর জোর দিয়েছে। হাওরে উৎপাদিত ধান ও মাছ বিদেশে রপ্তানি করে আমরা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়াতে পারি। একই সঙ্গে মজবুত করতে পারি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির ভিত্তি। তাই এবারের বাজেটে হাওরের জন্য জুতসই পরিকল্পনা ও বরাদ্দ প্রয়োজন।’