কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীন ক্রেতা–বিক্রেতারা। আজ সোমবার বিকেলে খুলনা নগরের ডাকবাংলা মোড়ের খুলনা বিপণিকেন্দ্রে
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

‘মার্কেটে ঢোকার পথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে মৃত্যুঝুঁকি আছে—এই সতর্কবাণী অবশ্যই দৃশ্যমান স্থানে রাখতে হবে। দোকানগুলোতে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে এবং দুজনের মধ্যে তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।’

করোনার বিস্তার ঠেকাতে খুলনা জেলা প্রশাসনের আরোপিত দ্বিতীয় দফা বিধিনিষেধের অন্যতম বিধিনিষেধ ছিল এগুলো। তবে বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন আজ সোমবার নগরের কোনো মার্কেটেই অবশ্যপালনীয় এসব বিষয় মানতে দেখা যায়নি। আর সড়কে যানবাহন এবং মানুষের আনাগোনাও ছিল প্রচুর। অর্ধেকের কম যাত্রী তোলার নিয়মটাও অনেকে মানেননি। তবে ইজিবাইকের যাত্রীদের আগের চেয়ে মাস্ক পরার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে।

জেলা করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খুলনা জেলা ও নগরে ১৩ জুন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে মশিউর রহমান বিপণিকেন্দ্রে প্রবেশমুখেই চানাচুর-মুড়িমাখা বিক্রি করছিলেন মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি। পাশে গোল হয়ে ছয়জন তরুণ সেই মুড়িমাখা খাচ্ছিলেন। প্রবেশমুখে ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে মৃত্যুঝুঁকি আছে’ এই সতর্কবাণী না থাকলেও একটি ব্যানার ঝুলছিল। তাতে লেখা—‘স্বাস্থ্যবিধি মানিয়া ব্যসায়ী প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে চাই। ব্যবসা করিয়া বাঁচতে চাই।’
প্রবেশমুখের দোকানগুলোতেই কারও মুখেই মাস্ক ছিল না। ভেতরে ঢুকেও একই অবস্থা দূরত্ব মানা তো দূরে থাক, মাস্কই নেই বেশির ভাগের মুখে।

সেখানকার আল মদিনা বোরকা হাউজের স্বত্বাধিকারী মো. ফারুখ শেখ বলছিলেন, ‘বেচাকেনা ভালো না। আর সব সময় মাস্ক পরে থাকা যায় না। কারোরই এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। প্রশাসনের লোকজনও তো এখন আর আসে না।’

কথা হয় ওই বিপণিকেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বলি। তবে সব সময় তা সবাই মানে না। আর আগে একটা সময় সব মার্কেটের সামনে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ছিল। আমরাও বেসিন ভাড়া করে সেই ব্যবস্থা করেছিলাম। এখন আপাতত কোনো মার্কেটের সামনেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই। আমরাও রাখিনি। এভাবেই ঢিলেঢালা হয়ে গেছে।’

ঠিক পাশেই রেলওয়ে বিপণিকেন্দ্র। সেখানেও একই রকম পরিবেশ। কেনাবেচা হচ্ছে গায়ে গা লাগিয়ে। বেশির ভাগ দোকানির মুখে মাস্ক নেই। ডাকবাংলা ক্লে রোডের হ্যানিমান মার্কেট, ডাকবাংলা সুপার মার্কেটসহ কোনো মার্কেটেই স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। ক্রেতাদের দু–একজন মাস্ক পরলেও বিক্রেতাদের অধিকাংশের সেই প্রবণতা ছিল না। কোথাও হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও ছিল না। আর ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে মৃত্যুঝুঁকি আছে’ এই সতর্কবাণীর বদলে ছিল ‘স্বাস্থ্যবিধি মানিয়া ব্যসায়ী প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে চাই। ব্যবসা করিয়া বাঁচতে চাই’ বার্তা।

ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার কথা থাকলেও তা মানছেন না অনেক চালক। তবে যাত্রীদের মুখে মাস্ক পরা বেড়েছে। আজ সোমবার খুলনা নগরের শিববাড়ী মোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

পৌনে ১২টার দিকে ক্লে রোডের ট্রাফিক আইল্যান্ডে তিন-চারজন পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাশে একজন বিক্রি করছিলেন নানান রঙের পর্তুলিকা ফুলের ডাল। ১৫-২০ জন নারী ক্রেতা তা কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন। সেই ছবি তুলতে দেখে মো. মহসিন নামের একজন পুলিশ সদস্য বলেন, ‘বারবার নিষেধ করছি, শুনছে না। লাঠিপেটা তো আর করা যায় না।’

কিছুটা সামনে গিয়ে অভিজাত বিপণিবিতান খুলনা শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, একজন নিরাপত্তারক্ষী মাস্ক ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না। যাঁদের মাস্ক নেই তাঁদের মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন। তবে বিনিময়মূল্য রাখছিলেন ৫ টাকা করে। সোহেল রানা নামের ওই কর্মী জানান, সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫০টির বেশি মাস্ক তিনি বিক্রি করেছেন।

তবে ভেতরে ঢুকে দেখা গেল গেটের বাইরের সচেতনতা অনেকটা উধাও। অনেক বিক্রেতার মুখে মাস্ক নেই। থাকলেও থুতনিতে। হাত ধোয়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই। মো. গিয়াস উদ্দিন নামের এক বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘আগে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ছিল, এখন নেই। আর যাঁদের আগ্রহ নেই তাঁরা মাস্ক পরছেন না। আমাদের মালিকের নির্দেশ সব সময় মাস্ক পরে থাকার।’

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে নগরের পিকচার প্যালেস মোড়ের জলিল মার্কেটের সামনে র‍্যাবের চার-পাঁচটি টহল গাড়ি দেখা যায়।
জলিল মার্কেট ও পাশের ফ্রেন্ডস আর্কেড মার্কেটে ঢুকেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। জলিল মার্কেটের প্রবেশমুখেই একটা কসমেটিকসের দোকানের তিনজন বিক্রয়কর্মী মাস্ক ছাড়াই ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তাঁদের একজন মো. জাকারিয়া বললেন, ‘গরমে মাস্ক রাখা যাচ্ছিল না। তাই খুলে ছিলাম।’

মার্কেটে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা আছে কি না, প্রশ্ন করতেই আগ্রহ বেড়ে গেল জাকারিয়ার। আছে—উত্তর দিয়ে বাইরে এসে একটা জায়গা দেখিয়ে বললেন, ‘ওই তো হাত ধোয়ার জায়গা।’ এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল, পাশাপশি দুটো পানির ট্যাপ। সঙ্গে একটা নেটের ব্যাগ। হয়তো কোনো একসময় তাতে সাবান থাকত। তবে এখন আর নেই।