হিমাগারে আলু নেওয়া বন্ধ
আলু সংরক্ষণের জন্য জেলায় ১৫টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে মোট উৎপাদিত আলুর মাত্র ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ সংরক্ষণ করা যাবে।
ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিবছর ব্যাপক আলু উৎপাদন হয়। মৌসুমের শুরুতে আলুর বাজারদর কম থাকে বলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু সংরক্ষণ করেন। পরে বাজারদর বাড়লে তাঁরা আলু হিমাগার থেকে বের করে বিক্রি করেন। কিন্তু এবার জায়গার স্বল্পতার কারণে অধিকাংশ হিমাগারে আলু নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় বাজারে আলুর দাম কমতে শুরু করেছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ কৃষকেরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৭ হাজার ৬৭৭ হেক্টর জমিতে ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, অ্যাস্টারিক্স জাতের আলুর আবাদ হয়েছে। আর আলু উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৭৯৮ মেট্রিক টন। আলু সংরক্ষণের জন্য সব মিলিয়ে জেলায় ১৫টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে, যা মোট উৎপাদিত আলুর মাত্র ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ। ফলে উৎপাদিত অধিকাংশ আলু থেকে যাচ্ছে সংরক্ষণের বাইরে।
সদর, বালিয়াডাঙ্গী ও রানীশংকৈল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আলুচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিন দশেক আগে খেত থেকে প্রতি কেজি ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, অ্যাস্টারিক্স জাতের আলু বিক্রি হয়েছে ১৩ থেকে ১৪ টাকা। আর গত রোববার হিমাগারে আলু সংরক্ষণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সোমবার প্রতি কেজি আলুর দাম কমে দাঁড়ায় ১২ টাকা। গত শুক্রবার সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকার ইজাব গ্রুপের হিমাগার হিমাদ্রী লিমিটেডের মূল ফটক বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভেতরে মাইকে চলছে আলু সংরক্ষণ বন্ধের ঘোষণা। পাশের হাওলাদার হিমাগার লিমিটেডের মূল ফটকে আলু নেওয়া বন্ধের নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলার দুরামারি-রুহিয়া সড়কের আমানত, পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাহবার, শীবগঞ্জের বাবলু স্পেশালাইজড, মাদারগঞ্জের এসবি, হরিহরপুরের কাদের ও বালিয়াডাঙ্গী সড়কের লক্ষ্মী প্রিজার্ভ প্রাইভেট লিমিটেড হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, সেসব হিমাগার কর্তৃপক্ষও আর আলু নিচ্ছে না।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাওলাদার হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য এক ট্রাক্টর আলু এনেছিলেন বেগুনবাড়ি এলাকার কৃষক সনাতন রায়। কিন্তু হিমাগারে আলু নেওয়া বন্ধ দেখে তিনি আলু নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ১৩ টাকা। আর আজ (গতকাল) সেটা কমে হয়েছে ৯ টাকা। আলুর দাম আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই চাইছিলাম হিমাগারে রেখে দাম বাড়লে পরে বিক্রি করব। কিন্তু সেটা আর হলো না।’
ইজাব গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক এনামুল হক বলেন, এ হিমাগারের ধারণক্ষমতা ১১ হাজার মেট্রিক টন। গত সপ্তাহেই তা ভরে গেছে। এ অবস্থায় কৃষক সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে আলু আনলেও, তাঁরা তাঁদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
লক্ষ্মী প্রিজার্স প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক সৌরভ হোসেন বলেন, সাধারণত হিমাগারে আলু রাখার জন্য অগ্রিম বুকিং দিতে হয়। যারা আগে এসেছেন, তাঁদের আলু নেওয়া হয়েছে।
সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, খেত থেকে আলু তোলার পর বাছাই করছেন শ্রমিকেরা। কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, এ বছর আট বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। জমিতে যে পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়েছে, তাতে অন্তত ৮০ শতাংশ আলুই বীজের উপযোগী। তবে তিনি অর্ধেক পরিমাণ আলুও হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারছেন না। বাকি আলু কী করবেন তা নিয়ে ভাবছেন এখন। আবার এখন বিক্রি করলে কম দাম পাবেন।
সদর উপজেলার শিংপাড়া গ্রামের মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এ বছরই চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। কিন্তু মাঝের টানা বৃষ্টিতে খেতের বীজ আলু নষ্ট হয়ে যায়। পরে সেখানে আবার নতুন করে বীজ বপন করি। আলুর ফলন ভালো হলেও এখন হিমাগার রাখতে পারছি না। ’
জেলা হিমাগার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবদুল্লাহ জানান, ধারণক্ষমতার বেশি আলু উৎপাদন হওয়ায় সব আলু হিমাগারে নেওয়া সম্ভব নয়। যাঁরা আগে এসে স্লিপ নিতে পেরেছেন, তাঁদের আলু সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবু হোসেন বলেন, জেলায় উৎপাদনের তুলনায় হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জায়গা কম রয়েছে। কৃষকদের বাড়িতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।