হেমন্তের সকালে ম্যারাথনে সহস্রাধিক দৌড়বিদ

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে সিলেট রানার্স ক্লাবের আয়োজনে ম্যারাথনে অংশ নেওয়া দৌড়বিদেরা। শুক্রবার সকাল সিলেট নগরের আম্বরখানা থেকে তোলা ছবি
প্রথম আলো

ভোরের আলো তখন কেবল ফুটতে শুরু করেছে। হেমন্তের হালকা কুয়াশা মোড়ানো আবহে সিলেটের কিনব্রিজ এলাকায় জড়ো হয়েছেন সহস্রাধিক দৌড়বিদ। এই দলে আছে ১০ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৭১ বছর বয়সী প্রবীণ। রয়েছেন নারী। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে সিলেট রানার্স ক্লাবের আয়োজনে ‘কুশিয়ারা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হল সিলেট হাফ ম্যারাথন ২০২১’-এর চিত্র এটি। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টায় সিলেটের কিনব্রিজ থেকে শুরু হওয়া ম্যারাথন শেষ হয় শহরতলির লাক্কাতুরা এলাকায় গিয়ে।

আয়োজকেরা জানান, ম্যারাথনের দুটি বিভাগ ছিল। একটি ২১ দশমিক ১ কিলোমিটার, অপরটি মিনি ম্যারাথন ১০ কিলোমিটার। এই দুই বিভাগে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট ১ হাজার ২০০ জন দৌড়বিদ অংশগ্রহণ করেন। ২১ দশমিক ১ কিলোমিটার বিভাগে অংশ নেন মোট ৩৫০ জন, যাঁদের মধ্যে ১৫ জন নারী ও ৩৩৫ জন পুরুষ দৌড়বিদ। এই বিভাগে সব বয়সীরা একসঙ্গে প্রতিযোগিতা করেন, তবে নারী-পুরুষ পৃথক ক্যাটাগরিতে অংশ নেন। তবে ১০ কিলোমিটার বিভাগে বয়সের ভিত্তিতে আবার ছিল তিনটি উপবিভাগ। একটিতে ৪৫-৫৫ বয়সীরা, আরেকটিতে ৫৬ বছরোর্ধ্ব এবং শেষটি ছিল সব বয়সী ক্যাটাগরি। এই তিন উপবিভাগ মিলিয়ে ১০ কিলোমিটার বিভাগে মোট ৮৫০ জন অংশ নেন, যাঁদের মধ্যে ৭০ জন নারী ও ৭৮০ জন পুরুষ দৌড়বিদ ছিলেন। এই তিন উপবিভাগেও নারী-পুরুষ দৌড়বিদ পৃথকভাবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। সব মিলিয়ে আজকের ম্যারাথনে আটটি ক্যাটাগরিতে দৌড়বিদেরা অংশ নেন। আয়োজনে অংশ নিতে আগেই নিবন্ধন করা হয়েছিল।

বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হয় সকাল ১০টায়। স্টেডিয়ামে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট, মেডেল ও অর্থ তুলে দেন অতিথিরা। নারীদের ২১ দশমিক ১ কিলোমিটার ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন নাসরিন বেগম (৩২), দ্বিতীয় হয়েছেন মৌসুমি আক্তার (২৮) এবং তৃতীয় হয়েছেন নার্গিস জাহান (২৬)। পুরুষদের ২১ দশমিক ১ কিলোমিটার ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন মো. এলাহি সরদার (২৬), দ্বিতীয় মো. আসিফ বিশ্বাস (২৭) এবং তৃতীয় হয়েছেন মো. আল আমিন (৩০)।

দীর্ঘদিন থেকে ডায়াবেটিসজনিত সমস্যায় ভুগছিলাম। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমি প্রথমে হাঁটা শুরু করি। পরবর্তী সময়ে দৌড়ের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। এখন প্রতিদিনই ভোরে নিয়ম করে দৌড়াই। নিয়মিত দৌড় এখন নেশায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া অন্যদের দৌড়াতে উদ্বুদ্ধ করছি।
হাসিনা আক্তার (৫৬), মিনি ম্যারাথনে অংশ নেওয়া নারী

নারীদের ১০ কিলোমিটার সব বয়সী ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে সাইদা আক্তার (১০), দ্বিতীয় আফসানা হালিমা (১১) এবং তৃতীয় হয়েছে স্নেহা জান্নাত (১১)। পুরুষদের ১০ কিলোমিটার সব বয়সী ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন সাজ্জাদ হোসেন (২৬), দ্বিতীয় গোলাম রাহাত (২৬) এবং তৃতীয় হয়েছেন রাসু আহমেদ (২৮)। নারীদের ১০ কিলোমিটার ৪৫-৫৫ বয়সী ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন শাহ তামান্না সিদ্দিকা (৪৬), দ্বিতীয় শাহ ফাহমিদা সিদ্দিকা (৪৭) এবং তৃতীয় হয়েছেন নিপা দাস (৪৬)। পুরুষদের ১০ কিলোমিটার ৪৫-৫৫ বয়সী ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন মোহাম্মদ ওয়াহাব খান (৪৬), দ্বিতীয় রেজাউল করিম (৪৮) এবং তৃতীয় হয়েছেন মো. পেয়ারুল ইসলাম (৪৬)। পুরুষদের ১০ কিলোমিটার ৫৬ বছরোর্ধ্ব ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন মো. আবু নাসের (৬০), দ্বিতীয় নৃপেন চৌধুরী (৭১) এবং তৃতীয় হয়েছেন শচীন্দ্র চন্দ্র অধিকারী (৬৮)। নারীদের ১০ কিলোমিটার ৫৬ বছরোর্ধ্ব ক্যাটাগরিতে একজন প্রতিযোগীই ছিলেন। ম্যারিয়েন চৌধুরী (৫৭) নামের ওই নারী দৌড় শেষ করে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন।

মিনি ম্যারাথনে অংশ নেওয়া হাসিনা আক্তার (৫৬) বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে ডায়াবেটিসজনিত সমস্যায় ভুগছিলাম। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমি প্রথমে হাঁটা শুরু করি। পরবর্তী সময়ে দৌড়ের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। এখন প্রতিদিনই ভোরে নিয়ম করে দৌড়াই। নিয়মিত দৌড় এখন নেশায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া অন্যদের দৌড়াতে উদ্বুদ্ধ করছি। মানুষের সুস্থ থাকার জন্য এটা খুব জরুরি।’

ম্যারাথনে অংশগ্রহণীদের মধ্যে ছিল শিশুরাও। ছিলেন নারীরাও। শুক্রবার সকাল সিলেট নগরের আম্বরখানা থেকে তোলা ছবি
প্রথম আলো

১০ কিলোমিটার ৫৬ বছরোর্ধ্ব ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়া নৃপেন চৌধুরী (৭১) বলেন, ‘এই বয়সেও আমি দৌড়াতে পারি, এটি অনেকেই বিশ্বাস করেন না। আমি শারীরিকভাবে সুস্থ, এটিই এর প্রমাণ।’ এমন প্রতিযোগিতায় এর আগেও অনেকবার অংশগ্রহণ করে জয়ী হয়েছেন বলে জানান নৃপেন চৌধুরী। তিনি সবাইকে নিয়মিত হাঁটা ও দৌড়ানোর জন্য আহ্বান জানান।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) জাকারিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা কঠিন একটি সময় পার করছি। এ সময়ে স্বাস্থ্যসচেতন হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, রানিং মানুষকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।’ তিনি সবাইকে স্বাস্থ্য ও শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত হাঁটাচলার পাশাপাশি দৌড়ানোর আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। আয়োজকদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন মনজুর আহমেদ আরিফ, মো. হাসান আহমেদ, মোহাম্মদ মিজান, কামরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবু সালেহ, আলি কামাল প্রমুখ। পরে অতিথিরা ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারী এবং বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

আয়োজক কমিটির সদস্য ও সিলেট রানার্স কমিউনিটির অ্যাডমিন ওরাকাতুল জান্নাত বলেন, ‘তরুণসমাজকে মাদক ও খারাপ দিক থেকে বিরত রাখতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। আমরা প্রতিবছরই ম্যারাথন আয়োজনের মাধ্যমে সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে দৌড়ের প্রতি আকৃষ্ট করছি। এই ধরনের আয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দৌড়বিদ আসেন, যা দেশের পর্যটনেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে।’ এ সময় তিনি দৌড়ে অংশ নেওয়া দৌড়বিদ এবং আয়োজনে সহায়তা দেওয়া প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।