১২ বছর পর বনের পথে খাঁচার বানর
১২ বছর ধরে খাঁচায় আটকা ছিল বানরটি। এ সময় আদরযত্নের কমতি ছিল না। কলা, ফলমূল—সবই খেতে পেয়েছে। কিন্তু বনের খোলামেলা পরিবেশে গাছপালায় ছুটে বেড়ানোর স্বাদ, আনন্দ কিছুই ছিল না তার জীবনে। বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খবরটি জানার পরই বানরটিকে উদ্ধার করেছে।
গতকাল বুধবার (১ জুন) বিকেলে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আমতৈল ইউনিয়নের অলোয়া গ্রামের শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ সেবা আশ্রম থেকে বানরটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এতে দীর্ঘ ১২ বছর পর সে ফিরে পাচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুরের দিকে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে বানরটির অবস্থান জানিয়ে একটি ফোন আসে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বানরটি উদ্ধারের ব্যবস্থা নেন। বুধবার বিকেলেই বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ারের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে বানরটিকে উদ্ধার করে।
সেবা আশ্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ধীরেন্দ্র শর্মার বরাত দিয়ে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জানিয়েছে, তাঁর (ধীরেন্দ্র শর্মা) একজন অনুসারী ১২ বছর আগে তাঁকে বানরের একটি বাচ্চা দেন। সেই থেকে ছোট বাচ্চাটিকে তিনি লালনপালন করে আসছেন। বাচ্চাটি এখন একটি পরিণত পুরুষ বানর। সেবা আশ্রমে যাঁরাই আসেন, তাঁরা বানরটিকে কলা, ফলমূল খেতে দিতেন। তাঁদের সঙ্গের বাচ্চারা বানর দেখে আনন্দ পায়। বানরটিকে এ জন্য আশ্রমে রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া যখন বানরটি সেবা আশ্রমে আনা হয়েছিল, তখন বানর পোষার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। বন্য প্রাণী আইন ২০১২ সালে হয়েছে। আইন সম্পর্কে বানরটির লালনপালনকারীর ধারণা ছিল না। তাঁকে বন্য প্রাণী আইনে বন্য প্রাণী ধরা, বন্য প্রাণী পোষা একটি অপরাধ জানানো হলে নিজে থেকেই বানরটিকে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
বানরটি বর্তমানে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজারে অবস্থিত বিভাগীয় কার্যালয়ে আছে। পরে এটিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসংলগ্ন জানকীছড়া বন্য প্রাণী রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে রাখা হবে। বানরটি সুস্থ–সবল আছে। দীর্ঘদিন প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে দূরে ছিল। সে জন্য রেসকিউ সেন্টারে কিছুদিন রাখা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বানরটিকে একটি খাঁচার মধ্যে রাখা হয়েছে। খাঁচা থেকে বের হওয়ার জন্য একধরনের ছটফটানি, চঞ্চলতা ছিল বানরটির আচরণে।
বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বানরটি অনেক দিন বন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এ রকম প্রাণী বনে অ্যাডজাস্ট করতে কিছুটা সময় নেয়। তবে বন্য প্রাণী পুষলেও তার বন্য স্বভাব থেকেই যায়। গভীর বনে ছাড়লে মিশে যেতে পারবে। এখন বনে অনেক ফলমূল আছে। খেতেও কোনো সমস্যা হবে না।’