১৪০ বছরেও মলিন হয়নি রেনউইকের লাল বাড়ি

গড়াই নদ ঘেঁষে চিনিকলের জন্য যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছিলেন রেনউইক। থাকতেন সেখানেই।

একতলা বাসভবনটিতে অন্তত ১০টি শোবার ঘর রয়েছে। এ ছাড়া ভবনের ভেতরেই আছে রান্নাঘরসহ একাধিক শৌচাগার
ছবি: তৌহিদী হাসান

চারদিকে ফুল-ফলের গাছ। এর মধ্যে লাল একটি দালান। কুষ্টিয়া শহরের কমলাপুর এলাকায় গড়াই নদের পাশে দালানটিতে একসময় থাকতেন স্কটিশ ব্যবসায়ী ডব্লিউ বি রেনউইক। তিনি চলে গেছেন বহুকাল আগে। এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত একতলা ভবনটি।

গড়াই নদ ঘেঁষে চিনিকলের জন্য যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছিলেন রেনউইক। প্রতিষ্ঠানটির নাম দিয়েছিলেন রেনউইক অ্যান্ড কোং। থাকতেনও সেখানে। বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করতে গড়ে তোলেন একতলা ভবনটি। কারখানার বর্তমান নাম রেনউইক, যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোং (বিডি) লিমিটেড। ব্রিটিশ কাঠামোর একতলা ভবনটি বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কারখানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে সারা দেশের চিনিকলগুলোর যন্ত্রাংশ তৈরি ও মেরামত করা হয়। ১৪০ বছরের পুরোনা প্রতিষ্ঠানটি এখনো টিকে আছে। ১৮৮১ সালে ডব্লিউ বি রেনউইক নাটোরের লক্ষ্মণহাটিতে আখমাড়াইকলের যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য রেনউইক অ্যান্ড কোং নামে কারখানাটি স্থাপন করেন। ১৮৯৬ সালে বড়বাজার এলাকায় যজ্ঞেশ্বর নামে আরেক বাঙালি যজ্ঞেশ্বর ও ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস নামে একই ধরনের আরেকটি কারখানা গড়ে তোলেন।

১৯৪৫ ও ১৯৬২ সালে দুবার হাতবদলের পর ১৯৭০ সাল পর্যন্ত দুটি কারখানাই ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত হতে থাকে। ১৯৭২ সালে দুটি কারখানা জাতীয়করণ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও জাহাজ নির্মাণ সংস্থা এবং পরে বাংলাদেশ চিনিকল সংস্থার অধীনে চলে যায়। ১৯৭৫ সালে ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের কাছে যায়। ১৯৭৯ সালে দুটি কারখানা একীভূত করা হয়। সেই থেকে ৩৯ দশমিক ৯৬ একর জায়গার ওপর রেনউইক, যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোং (বিডি) লিমিটেড নামে পরিচালিত হয়ে আসছে।

কারখানার ভেতরে রেনউইকের একতলা বাসভবনটিতে অন্তত ১০টি শোবারঘর রয়েছে। এ ছাড়া ভবনের ভেতরেই আছে রান্নাঘরসহ একাধিক শৌচাগার। কাঠের আড়ার সঙ্গে টালি দিয়ে ছাদ তৈরি করা হয়েছে। ভবনে প্রবেশ করতে মাঝখানে সিঁড়ি রয়েছে। জানালা–দরজা কাঠের তৈরি।

কারখানার নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে আছেন হাফিজুর রহমান। তিন বছর ধরে চাকরি করছেন। তাঁর বাবাও একই কাজ করতেন। হাফিজুর বললেন, একসময় এই বাড়িতে জেলা প্রশাসকেরা থাকতেন।

বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে মূল ফটক পার হতে হয়। ভেতরে বিশাল বাগান। সেখানে সবজি আবাদের পাশাপাশি ফুলবাগান রয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকেরা পাশের রেনউইক বাঁধে ঘুরতে গেলে লাল বাড়িটির দিকেও উঁকি দিয়ে যায়।

যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোং (বিডি) লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রশাসন আকুল হোসেন বললেন, শত বছরের পুরোনো বাড়িটি বর্তমানে কারখানার এমডির বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মাঝেমধ্যে ভবনটি সংস্কার করা হয়। শত বছরের পুরোনো হলেও বাড়িটি এখনো দেখতে সুন্দর।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন কুষ্টিয়া শিলাইদহ কুঠিবাড়ীর কাস্টোডিয়ান মুখলেচুর রহমান বলেন, ভবনটি যদি শত বছরের পুরোনো হয় এবং ইতিহাস বহন করে, তবে সেটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর অবশ্যই সংরক্ষণ করার দাবি রাখে। এ ব্যাপারে অধিদপ্তরকে জানানো হবে।

বাড়িটিতে বর্তমানে বাস করেন যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোং (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আল ওয়াদুদ আমিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সম্প্রতি এই কারখানায় যোগ দিয়েছি। এই বাড়িতেই থাকি। এর ইতিহাস তেমন জানা নেই।’