নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ চলাকালে ২০০ গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন তিনি। আজ সোমবার সকালে বসুরহাটের জিরো পয়েন্টের বঙ্গবন্ধু চত্বরে এক সভায় কাদের মির্জা এ আলটিমেটাম দেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের ওপর গত শনিবার সকালে সশস্ত্র হামলার প্রতিবাদে শনিবার ও গতকাল রোববার ৪৮ ঘণ্টার ওই অবরোধ কর্মসূচি চলে। তবে কাদের মির্জার করা গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ও কাদের মির্জার ভাগনে মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘কাদের মির্জা মিথ্যা অভিযোগ করে এখন মায়াকান্না কাঁদছেন। অথচ গত কিছুদিন আগে অবরোধের নামে যখন তাঁর ক্যাডাররা একের পর এক বাস ভাঙচুর করেছে, তখন তাঁর মায়াকান্না কোথায় ছিল?’
২০০ গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে কাদের মির্জার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কাছে এ রকম কোনো অভিযোগ এখনো আসেনি। অভিযোগ আসার আগে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। অবরোধকালে কোথাও গাড়ি ভাঙচুরের কোনো ঘটনা তাঁর জানা নেই।
সমাবেশে কাদের মির্জা তাঁর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, গতকাল তারা অবরোধের নামে ২০০ সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও বিভিন্ন গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এটা ওসির নেতৃত্বে, কোম্পানীগঞ্জে দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম হোসেনের নেতৃত্বে হয়েছে। তাঁরা লুটপাট করেছেন, মানুষের লাখ লাখ টাকা ডাকাতি করেছেন। এটা কোনো অবরোধ নয়, এটা ডাকাতি। কিন্তু একটা লোকও গ্রেপ্তার করা হয়নি। গতকাল রাতে ফখরুল ইসলাম ওরফে সবুজসহ তাঁর ছেলেরা ফায়ার সার্ভিসের সামনে দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। টাকাপয়সা সব নিয়ে গেছেন। এভাবে মুছাপুর, রামপুর, চর এলাহীতে তাণ্ডব চালানো হয়েছে।
কাদের মির্জা বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা না হলে পরশু দিন অবরোধ। দোকানপাট খোলা থাকবে, কিন্তু গাড়িঘোড়া চলবে না। অটোরিকশা চলবে। তবে সিএনজি, বাস এগুলো চলবে না—বিচার না হওয়া পর্যন্ত। কোনো বাস এখান থেকে ছেড়ে যাবে না।
মেয়র আবদুল কাদের মির্জা প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, কাল মঙ্গলবার যদি সন্ধ্যার আগে এই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা না হয়, পরশু দিন অবরোধ। দোকানপাট খোলা থাকবে, কিন্তু গাড়িঘোড়া চলবে না। অটোরিকশা চলবে। তবে সিএনজি, বাস এগুলো চলবে না—বিচার না হওয়া পর্যন্ত। কোনো বাস এখান থেকে ছেড়ে যাবে না। কালকের মধ্যে সিএনজিচালকদের ওপর হামলা ও তাঁদের গাড়ি ভাঙার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে প্রশাসনকে।
ভাগনে ফখরুল ইসলাম রাহাতকে গালাগাল করে কাদের মির্জা বলেন, ‘সে যে জায়গায় শোয়, সেটিও হিন্দুদের থেকে জোর করে আমি নিয়ে দিছি। সে থানায় গিয়ে টাকা দিয়ে আসে। টাকা কোথা থেকে দেয়? ব্যাংক ডাকাতি করেছে সে। ছয় জায়গাতে ধরা পড়েছে ইয়াবাসহ। টেন্ডারবাজি করে চাকরি-বাণিজ্য করে। এদের বিরুদ্ধে আপনাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। যে যেখানে পান গণপিটুনি দিবেন। তবে মারিয়েন না। এরা লুটেরা। এরা হরতালের নামে, অবরোধের নামে লুটপাট করেছে গতকাল সারা দিন।’
মামা কাদের মির্জার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফখরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ব্যাংকে চাকরি করেন। ব্যাংক ডাকাতি করলে তো ব্যাংকই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত। আসলে উনি পাগল হয়ে গেছেন, উনার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে, তাই এসব কথা বলে বেড়াচ্ছেন।