২৪ ঘণ্টার মাথায় জামিন, তবে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে সাবেক মেয়রকে

গোলাম মাহফুজ চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

স্ত্রীর অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করা এবং স্বামীর এতে সহযোগিতা করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় ২৪ ঘণ্টার মাথায় আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরী ওরফে অবসর চৌধুরী এবং তাঁর স্ত্রী কামরুন্নাহার শিমুল।

তবে দুর্নীতির আরেকটি মামলায় দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গোলাম মাহফুজ চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। এ কারণে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে।

বৃহস্পতিবার বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার স্ত্রীর দুর্নীতি ও এতে স্বামীর সহযোগিতা করার মামলার শুনানি শেষে গোলাম মাহফুজ-কামরুন্নাহার দম্পতির জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। তবে একই আদালত দুদকের করা আরেকটি মামলায় গোলাম মাহফুজ চৌধুরীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

গোলাম মাহফুজ চৌধুরীর স্ত্রী কামরুন্নাহার শিমুল জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী ক্যাশিয়ার পদে কর্মরত। আজ তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

এর আগে স্ত্রীর দুর্নীতি ও এতে স্বামীর সহযোগিতা করার মামলায় গতকাল বুধবার গোলাম মাহফুজ-কামরুন্নাহার দম্পতি বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। এ সময় বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার জামিন নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে মামলাটির অধিকতর শুনানির দিন জন্য আজ ধার্য করেন।

মাহফুজ-কামরুন্নাহার দম্পতি জয়পুরহাট পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সরদারপাড়া আলহেরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা।

দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ৩৬ লাখ ৭ হাজার ১৬৪ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮২১ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে গোলাম মাহফুজ চৌধুরীর স্ত্রী কামরুন্নাহারের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক। অবৈধ সম্পদ অর্জনে স্ত্রীকে সহযোগিতা করার অভিযোগে মামলায় গোলাম মাহফুজ চৌধুরীকেও আসামি করা হয়। গত বুধবার ওই মামলায় গোলাম মাহফুজ-কামরুন্নাহার দম্পতিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। আজ অধিকতর শুনানি শেষে এই মামলায় আদালত দুই আসামির জামিন মঞ্জুর করেন।

আরও পড়ুন

মো. মনিরুজ্জামান আরও বলেন, গোলাম মাহফুজ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৯৯ লাখ ১০ হাজার ৭৯৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮২১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে দুদকের বগুড়া সমন্বিত জেলা কার্যালয় সহকারী পরিচালক মো. নূর আলম বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করেছেন। মামলার পরপরই তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে তাঁকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেওয়া হয়। তবে ওই মামলায় হাজির হওয়ার আগেই অপর মামলায় গতকাল আদালতে জামিন নিতে এসে কারাগারে যেতে হয় তাঁকে। আজ স্ত্রীর দুর্নীতিতে সহযোগিতা করার মামলায় জামিন পেলেও অপর মামলাটিতে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাঁকে আটকাদেশ দেন। যে কারণে গোলাম মাহফুজ চৌধুরীকে কারাগারে থাকতে হচ্ছে।

দুদক সূত্র জানায়, গোলাম মাহফুজ চৌধুরীর নামে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়। ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই তিনি তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব দাখিল করেন। এতে তাঁর স্থাবর সম্পদ ৭৬ লাখ ৭৭ হাজার ২৬৭ টাকা এবং অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৯২ লাখ ২৫ হাজার ৯৩১ টাকা দেখানো হয়। একই সঙ্গে তাঁর দেনা দেখানো হয় ৬৯ লাখ ৮৭ হাজার ৫০ টাকা।
অনুসন্ধানে গোলাম মাহফুজের স্থাবর সম্পদ ৭৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮৮ টাকা বলে তথ্য উঠে আসে। সে হিসাবে তিনি ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮২১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এ ছাড়া ৯৯ লাখ ১০ হাজার ৭৯৪ টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।