৩০ মণের ‘কালো মানিক’ নিয়ে বিপাকে দুই ভাই
বাড়িতে এসে দু-একজন ব্যাপারী ৩০ মণ ওজনের ‘কালো মানিক’ নামের ষাঁড়টির দাম করেছিলেন ১১-১২ লাখ টাকা পর্যন্ত। আরও ভালো দামের আশায় ঈদের চার দিন আগে ঢাকার হাটে নেওয়া হয় ষাঁড়টি। সেখানে একজন মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো দাম বলেছিলেন। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার সবচেয়ে বড় ষাঁড়টির আর কেউ দামই বলেননি।
প্রায় ১২ ফুট লম্বা সুঠাম দেহের কালো রঙের ষাঁড়টির মালিক রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মৃধাডাঙ্গা গ্রামের দুই ভাই রঞ্জু মণ্ডল ও ফজলু মণ্ডল। কোরবানির ঈদে ষাঁড়টি বিক্রি করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন গরু ব্যবসায়ী এই দুই ভাই।
ফজলু মণ্ডল জানান, প্রায় ৯ মাস আগে তিনি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সোনাপুর থেকে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ষাঁড়টি কেনেন। কালো রঙের দেখতে অনেক সুন্দর হওয়ায় আদর করে নাম রেখেছিলেন ‘কালো মানিক’। ইচ্ছা ছিল কোরবানির ঈদে ভালো দামে বিক্রি করবেন। এ জন্য ষাঁড়টিকে অনেক আদর-যত্ন করে লালন-পালন করছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ভুসিসহ ন্যূনতম এক হাজার টাকার দানাদার খাবার দেন। আশপাশের এলাকা থেকে কালো মানিক দেখতে মানুষজন ভিড় করেন। ষাঁড়টি ক্রয়মূল্যসহ এ পর্যন্ত প্রায় আট লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বিক্রিমূল্য ধরেছিলেন ১৮ লাখ টাকা।
রঞ্জু মণ্ডল বলেন, এই ঈদে কালো মানিকের সঙ্গে গ্রাম থেকে ২২টি ষাঁড় কিনে বিক্রির জন্য ঢাকায় নেন। সেখানে প্রায় ৬ লাখ টাকা লোকসানে ২১টি ষাঁড় বিক্রি করেন। আরও একটি ফেরত নিয়ে আসেন। ফেরত আনা ষাঁড়টির কেনা দাম ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। দাম উঠেছিল মাত্র ৯০ হাজার টাকা। পরে ওই ষাঁড়সহ কালো মানিক নিয়ে পড়েছেন মহা বিপাকে। এমনকি ঢাকায় নিতে ১৪-১৫ ঘণ্টা এবং ফিরিয়ে আনতে আরও ১৩-১৪ ঘণ্টা গাড়িতে দাঁড়িয়ে থাকায় অসুস্থ হয়ে যায় কালো মানিক।
দুই ভাই বলেন, দাদা আফাজ উদ্দিন মণ্ডল, বাবা আকবর মণ্ডল গ্রাম থেকে দুধেল গাভি, বকনা কিনতেন। বাড়ি এনে কিছুদিন পালার পর বিক্রি করে দিতেন। এতে তাঁদের যে আয় হতো, তাই দিয়ে সংসার চলত। বাপ-দাদার ব্যবসা ধরে রাখতে প্রায় ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন রঞ্জু মণ্ডল। কয়েক বছর হলো ব্যবসা শুরু করেন ছোট ভাই ফজলু মণ্ডল। ব্যবসায় মাঝেমধ্যে ভালোই লাভ হয়। মাঝেমধ্যে অনেক টাকা লোকসানও গুনতে হয়।
এ জন্য বাড়ির উঠানে গড়ে তুলেছেন খামার। তাতে ২০টির মতো গরু রাখা যায়। কেনাবেচার মধ্যে থাকায় সব সময় ১০-১২টি করে গরু থাকে। বিশেষ করে দুধেল গাভি খামারে বেশি থাকে। খামারে এখনো রয়েছে ৯টির মতো গাভি। কালো মানিক অসুস্থ হওয়ায় আলাদা রাখতে হচ্ছে।
রঞ্জু মণ্ডল বলেন, গরু ব্যবসায় গত দুই বছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। ভেবেছিলেন কালো মানিক বিক্রি করে অনেকটা ক্ষতি পোষাবেন। সরকারিভাবে কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পাননি। খামারের কোনো গরুর চিকিৎসার প্রয়োজন হলে প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে কাউকে ডেকে আনলে তাঁকে দুই-তিন হাজার টাকা ফি দিতে হয়। না হলে চিকিৎসা ভালোমতো করেন না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, গোয়ালন্দের এটাই সবচেয়ে বড় ষাঁড়। বিজ্ঞানসম্মতভাবে লালন-পালন করা হচ্ছে। সরকারিভাবে প্রণোদনা যাতে পান, এ জন্য তালিকায় এবার তাঁদের নাম দেওয়া হয়েছে। গরুর কিছু হলে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেন। যখন বড় ধরনের সমস্যায় পড়েন, তখন জানান। যে কারণে বাড়তি খরচ হয় বলে তিনি জানান।