৩ দিনের নোটিশে ভোট গ্রহণ, ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের অসন্তোষ

দক্ষিণ ও উত্তর উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

হঠাৎ ভোটের তারিখ ঘোষণা করায় সব প্রার্থী প্রচারণায় নামেননি। সব প্রার্থীর পোস্টারও টানানো হয়নি। গত সোমবার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া বাজারেছবি: প্রথম আলো

বরিশালের সংঘাতপূর্ণ দক্ষিণ ও উত্তর উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) আগামী বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সীমানা নিয়ে জটিলতা ও সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার পর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সেখানে নির্বাচন স্থগিত করার নির্দেশ দেন আদালত।

ওই ঘটনার ১৩ মাস পর ৬ ফেব্রুয়ারি নতুন করে ওই দুই ইউপিতে ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তবে হঠাৎ করে ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ওই দুই ইউপিতে আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী মিঠু চৌধুরী ও রুমা সরদার।

তাঁরা বলেছেন, সীমানা জটিলতার কারণে হাইকোর্টে রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই রিট আবেদনের নিষ্পত্তি হয়নি। এর মধ্যেই আকস্মিক তিন দিনের নোটিশে ভোট গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। এটা কিসের ভিত্তিতে দিয়েছে সেটা বোধগম্য নয়।

মিঠু চৌধুরী ও রুমা সরদার স্থানীয় সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অপর দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দক্ষিণ উলানিয়ায় মিলন চৌধুরী ও উত্তর উলানিয়ায় জামাল হোসেন মোল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর এই দুই ইউনিয়নের ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে ধারাবাহিক সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। এতে দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা চলছে। পরে সীমানা জটিলতায় রিট আবেদন করলে হাইকোর্ট নির্বাচন স্থগিত করেন।

নির্বাচনের ভোট গ্রহণের নতুন তারিখ নির্ধারিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী দক্ষিণ উলানিয়ায় জামাল হোসেন মোল্লা ও উত্তরে মিলন চৌধুরীকে নিয়ে গত সোমবার ঢাকা থেকে এলাকায় আসেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। তাঁর বাড়ি মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায়। তিনি এই দুই প্রার্থীকে নিয়ে বিভিন্ন পথসভা ও প্রচারণায় অংশ নেন।

মিঠু চৌধুরী অভিযোগ করেন, ১৩ মাস স্থগিত থাকার পর মাত্র তিন দিন সময় দিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত জানায়। তিন দিনের নোটিশে ভোট গ্রহণের এই সিদ্ধান্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এতে ভোটারদের মধ্যে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। সুষ্ঠু ভোটের কোনো পরিবেশ নেই। তাই আমরা প্রচারের মাঠে নেই। মানুষের মধ্যেও ভোট নিয়ে আগ্রহ নেই। নির্বাচন করে আর কী হবে?’

অভিযোগ অস্বীকার করে নৌকার প্রার্থী জামাল হোসেন মোল্লা বলেন, নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণার পর মানুষের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পড়েছে। এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় আছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুন্নবী বলেন, ‘উচ্চ আদালতের মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ের তথ্য আমার কাছে নেই। তবে নির্বাচন কমিশন আমাদের চিঠি দিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি। ভোট সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আশা করি নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে।’