মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ভাটেরা থেকে সিলেট রেলস্টেশন পর্যন্ত প্রায় ৪৮ কিলোমিটার রেলপথ। রেলওয়ের হিসাবমতে, এই পথে দুটো রেলস্টেশনের অধীন ২৫টি রেলক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র চারটির অনুমোদন রয়েছে। আর অনুমোদন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে ২১টি। তবে এ ছাড়া আরও ১০৯টি রেলক্রসিং রয়েছে, যার কোনো অনুমোদনই নেই।
গত রোববার দুপুরে কুলাউড়ার ভাটেরা এলাকার হোসেনপুরের কাছে যে রেলক্রসিং পাড়ি দিতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাস দুমড়েমুচড়ে যায়, সেটিও অনুমোদনহীন একটি রেলক্রসিং। এ দুর্ঘটনায় দুজন যাত্রী নিহত ও একই পরিবারের ছয়জন আহত হন। এ ঘটনার পর সিলেট ও ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও স্টেশনে যোগাযোগ করে ৪৮ কিলোমিটার রেলপথে শতাধিক অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিং থাকার বিষয়টি জানা গেছে।
রেলওয়ের প্রকৌশল (পথ) বিভাগ সূত্র থেকে জানা গেছে, সিলেট রেলস্টেশন এলাকার দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি ও মোমিনখলা এলাকায় দুটো রেলক্রসিং রয়েছে। সিলেট-ছাতক রেলপথে রয়েছে পাঁচটি। এরপর ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও রেলস্টেশনের অধীন ছয়টির মধ্যে দুটো অনুমোদন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এরপর কুলাউড়ার ভাটেরা পর্যন্ত সিলেট জেলার অংশের রেলপথে অন্তত শতাধিক রেলক্রসিং রয়েছে, যার কোনো অনুমোদনই নেই।
এভাবে রেলক্রসিং করা অবৈধ। কোনো অনুমতি নেই, যা রেল আইন অনুযায়ী বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য।
রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, রেলপথে ক্রসিং তৈরি করতে হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পূর্বানুমতি নিতে হয়। ক্রসিংয়ের স্থানে রেলপথের দুই পাশে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ফটক নির্মাণ করতে হবে। এরপর কমপক্ষে তিনজন প্রহরীর মজুরি, সিগন্যাল ব্যবস্থাপনার খরচও বহন করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এরপর সরেজমিন পরিদর্শন করে রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণের পর রেলস্টেশন থেকে ওই ক্রসিংয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, অনুমোদন নিয়ে রেলক্রসিং নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয়বহুল হওয়ায় মানুষ অনুমোদন ছাড়াই নিজেদের মতো করে রেলপথের দুই পাশে রাস্তা দেখিয়ে লেভেল ক্রসিং হিসেবে ব্যবহার করছেন।
কুলাউড়ার ভাটেরা এলাকার হোসেনপুর পর্যন্ত অনুমোদনহীন ক্রসিং বেশি বলে জানায় ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষ। স্টেশনমাস্টার মনির হোসেন বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জ ও মাইজগাঁওয়ে ছয়টি ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে দুটো অনুমোদিত। বাকি চারটির কোনো অনুমোদন নেই। এরপর ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে কুলাউড়ার ভাটেরা পর্যন্ত পথে পথে রেলক্রসিং। যেখানে গ্রামীণ রাস্তা গিয়ে রেলপথে মিলিত হয়েছে, সেখানেই ক্রসিং হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গত রোববার ভাটেরা এলাকায় যে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটে, সেটিও অনুমোদনহীন। সোমবার দুপুরে সরেজমিনে সিলেট রেলস্টেশনভুক্ত দক্ষিণ সুরমার মোমিনখলা, শিববাড়ি, খোজারখলা, হাজিগঞ্জ ও জলকরকান্দি এলাকায় রেলপথে সাতটি ক্রসিং অরক্ষিত অবস্থায় দেখা গেছে।
জানতে চাইলে সিলেট রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. খলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত রেলওয়ের প্রকৌশল (পথ) বিভাগের এক পর্যবেক্ষণে ৪৮ কিলোমিটার রেলপথে ২৫টি লেভেল ক্রসিং অনুমোদন প্রস্তাবের তালিকায় ছিল। ওই সময় এসব এলাকায় আরও অন্তত অর্ধশতাধিক লেভেল ক্রসিং দেখা গেছে। দেড় বছর পর এ সংখ্যা শতাধিক হবে।
রেলপথের আশপাশে রাস্তা হওয়ায় যত্রতত্রভাবে রেলক্রসিং হচ্ছে জানিয়ে ব্যবস্থাপক আরও বলেন, এভাবে রেলক্রসিং করা অবৈধ। কোনো অনুমতি নেই, যা রেল আইন অনুযায়ী বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য। এ ব্যাপারে রেলওয়ের প্রকৌশল (পথ) বিভাগ পদক্ষেপ নেবে।