শেখ হাসিনা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়
৫৮ শিক্ষার্থীর এখন কি হবে
শেখ হাসিনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের ৫৮ শিক্ষার্থী অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা দিতে পারছে না।
সব নিয়ম মেনে বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে, গত ছয় মাস ক্লাসও করেছে তারা। তবে এখন তাদের অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ভর্তি রেজিস্ট্রারে নাম না থাকায় তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই নয়। এ পরিস্থিতিতে পড়েছে গোপালগঞ্জের শেখ হাসিনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের ৫৮ শিক্ষার্থী।
ওই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা গতকাল বুধবার গোপালগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সারা হাচিনের বাবা শহিদুল ইসলাম খান। এর আগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
লিখিত বক্তব্যে শহিদুল ইসলাম খান বলেন, ২০২২ সালে শেখ হাসিনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে ৫৮ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ১৩ জন এবং কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে সপ্তম শ্রেণিতে ১৮ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ১৬ জন ও নবম শ্রেণিতে ১১ জন ভর্তি হয়। ছয় মাস ক্লাস করার পর ২ জুন অনুষ্ঠেয় অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার ফি জমা দিতে গেলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করেনি। ভর্তি রেজিস্ট্রারে নাম না ওঠায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা ও বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।
শহিদুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের সন্তানদের ভর্তির আবেদন ফরম দিয়েছিল। আমরা তা পূরণ করে নির্ধারিত ভর্তি ফি বাবদ ওই বিদ্যালয়ের হিসাব নম্বরের অনুকূলে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, ডিসি কমপ্লেক্স শাখায় জমা দিই। আমাদের কাছে রসিদও রয়েছে। জানুয়ারি থেকে আমাদের সন্তানেরা নিয়মিত ক্লাস করে আসছে। বিদ্যালয় থেকে তাদের স্কুল ড্রেসের কাপড় ও বোর্ডের বই সরবরাহ করা হয়েছে।’
শহিদুল ইসলাম খান বলেন, গত ৫ এপ্রিল বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হুমায়রা আক্তার বদলি হয়ে যান। তিনি ওই ৫৮ শিক্ষার্থীর ভর্তি অনুমোদন করেন। পরে নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দিয়েছেন শাহানাজ রেজা। ২ জুন বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা শুরু হবে। বিদ্যালয়ে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, সাবেক অধ্যক্ষ ৫৮ শিক্ষার্থীর নাম ভর্তি রেজিস্ট্রারে তুলে না যাওয়ায় এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর মা জাকিয়া রশীদ বলেন, ‘বছরের অর্ধেক সময় পার হয়ে গেছে। এখন আমার সন্তানকে কোথায় ভর্তি করাব? আমার মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।’
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ শাহানাজ রেজা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। সাবেক অধ্যক্ষ ভর্তি রেজিস্ট্রারে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের নাম লিপিবদ্ধ করে যাননি। এখানে আমি শিক্ষার্থীদের কোনো ত্রুটি দেখছি না। ভর্তি কমিটি এ দায় এড়াতে পারে না।’ এ বিষয়ে যদি কিছু জানার থাকে তবে তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
সাবেক অধ্যক্ষ হুমায়ারা আক্তার বলেন, ‘৫৮ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি টাকা নিতে নিষেধ করলেও কতিপয় শিক্ষক ও কর্মচারীর যোগসাজশে এ কাজ হয়েছে। আমি বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করেছিলাম। বদলি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আর এগোতে পারিনি।’
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, যে ৫৮ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের কথা বলা হচ্ছে, তারা এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই নয়। বিদ্যালয়ে তাদের কোনো কাগজপত্র জমা নেই। হাজিরা খাতায় নাম নেই। তারা অবৈধভাবে বিদ্যালয়ে ক্লাস করছিল।