৫ বছরেও শেষ হয়নি ভবন নির্মাণের কাজ

২০১৭ সালের প্রথম দিকে ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ওই বছর বিজিবি ও বিএসএফের বাধার কারণে ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে জরাজীর্ণ ভবন ও সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে পুলিশ। কিন্তু চার দফায় এই ভবনের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। পাঁচ বছর আগে কাজ শুরু হলেও ভবন নির্মাণ শেষ হয়নি। ভারতের অনুমতির অপেক্ষায় পড়ে আছে নির্মাণকাজ। এদিকে বিদ্যমান ভবনের অনুন্নত অবকাঠামোর কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দুই দেশের যাত্রীরা।

অভিবাসন সূত্রে জানা যায়, আখাউড়া উপজেলার কালিকাপুর ও ভবানীপুর মৌজার ৩ একর ১০ শতাংশ জায়গায় আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। সেখানে বিদ্যমান ভবনটি ১৯৫৩ সালে নির্মাণ করা। বর্তমানে চেকপোস্টে একটি কার্যালয় ও ব্যারাক ভবন, একটি এসআই কোয়ার্টার ও একটি রান্নাঘর আছে। ১৯৬৫-৬৬ সালে এই ভবনে অভিবাসনের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর আর এখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়নি। ভবনটি এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

২০১৬ সালে আখাউড়ায় নতুন অভিবাসন ভবনের নির্মাণকাজের দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। মেসার্স বিজনেস সিন্ডিকেট ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ছয়তলার ভিতের ওপরে দোতলা ভবন নির্মাণের চুক্তি হয়। ২০১৭ সালে নির্মাণকাজের সামগ্রী নিয়ে জড়ো করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ১২০ গজ দূরত্বে আখাউড়া অভিবাসনের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে প্রথম দফায় ভবন নির্মাণের ব্যাপারে বিএসএফ থেকে বাধা আসে। বিজিবির মাধ্যমে পাঠানো ওই মৌখিক আপত্তিতে আন্তর্জাতিক সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের ভেতরে স্থাপনা নির্মাণের বিধিনিষেধের কথা বলা হয়।

আখাউড়া ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের প্রথম দিকে আখাউড়া অভিবাসন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ওই বছরের ১৫ মার্চ বিজিবি ও বিএসএফের বাধার কারণে প্রথমবার নির্মাণকাজ বন্ধ হয়। ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল আবার নির্মাণকাজ শুরু হয়। ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় আবার নির্মাণকাজ বন্ধ করে বিএসএফ। পরে কিছুদিন কাজ চললেও ২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর তৃতীয় দফায় নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলে বিএসএফ।

বিজিবি তখন বিএসএফের বরাত দিয়ে জানায়, ৩৫ ফুটের বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা যাবে না। ২০২০ সালের ৪ জুলাই ৩৫ ফুট উচ্চতার নতুন ভবনের নকশা বিজিবি এবং ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে ভারতে পাঠানো হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই নকশার অনুমোদন পাওয়া যায়নি। ২০২০ সালের ৮ আগস্ট আবার ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। সীমান্তের শূন্যরেখার ১৫০ গজের ভেতরে দুই দেশের সীমানাপ্রাচীর-সংলগ্ন ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা অংশে বিএসএফের ভবন নির্মাণকাজে বিজিবি বাধা দেয়। ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিএসএফ আবার বাংলাদেশের ইমিগ্রেশনের ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।

২৩ মার্চ বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ আখাউড়া স্থলবন্দর পরিদর্শন করেন। সে সময় ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কিছু নিয়মকানুন আছে। এই নিয়মকানুন তাদেরও মানতে হয়, আমাদেরও মানতে হয়। এ নিয়ম মেনেই ভবন নির্মাণকাজটি করা হবে।’

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, চেকপোস্টের পুরোনো ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনের কক্ষটিও খুব ছোট ও জরাজীর্ণ। উভয় দেশের যাত্রীদের একটি কক্ষেই প্রয়োজনীয় সব কাজ করতে হয়। এতে যাত্রীদের অনেক সময় ব্যয় হয়। পুরোনো ভবনের পশ্চিম দিকে নির্মাণাধীন নতুন ভবন। সেখানে ভিতসহ একতলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভবনের উত্তর দিকে বালু, পাথর ও ইট স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

পল্লী বিদ্যুতের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কাইজার নূর ও ব্যবসায়ী মিনহাজুর রহমান বলেন, আখাউড়া চেকপোস্টে ছোট একটি কক্ষে দুই দেশের যাত্রীদের ইমিগ্রেশনের সব কাজ করতে হয়। এতে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। নতুন ভবনের কাজ দ্রুত শুরু করা উচিত।

আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আবদুল হামিদ বলেন, সীমান্তের শূন্যরেখা-সংলগ্ন এলাকায় বিএসএফ ভবন নির্মাণ করছে। এতে বিজিবি বাধা দেয়। পরে বিএসএফও বিজিবির মাধ্যমে আখাউড়ার ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণে বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের ভেতরেই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছিল। এই কারণেই জটিলতা তৈরি হয়েছে।