অরুণ কুমার সাহা, হেনা সাহা

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় নিজবাড়িতে এক দম্পতিকে গলা কেটে হত্যার ঘটনার ছয় বছর পরও এর রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাঁচবার পরিবর্তন করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জোড়া খুনের বিচার নিয়ে হতাশ পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর নিজ বাসায় খুন হন ব্যবসায়ী অরুণ কুমার সাহা (৭৪) ও তাঁর স্ত্রী হেনা রানী সাহা (৬৫)। তাঁদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। তাঁদের সঙ্গে শুধু তাঁদের বড় ছেলে সুজিত কুমার সাহা থাকতেন।

ঘটনার আগের দিন সুজিত ঢাকায় যান। পরের দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মা-বাবার খোঁজ নিতে মুঠোফোনে সুজিত তাঁদের ফোন করেন। একাধিকবার ফোন করে সংযোগ না পাওয়ায় তিনি দুপুরের দিকে এক প্রতিবেশীকে খোঁজ নিতে বলেন। পরে ওই প্রতিবেশী অরুণের বাসার দরজা খোলা দেখে ভেতরে ঢোকেন এবং পৃথক দুটি কক্ষের মেঝেতে গলাকাটা ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় অরুণ ও হেনার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

২৬ অক্টোবর তাঁদের বড় ছেলে সুজিত কুমার সাহা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে দুর্গাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই সময় পুলিশ হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পরে সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

থানা-পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দুর্গাপুর থানা-পুলিশের কাছ থেকে ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দেওয়া হয়। সিআইডি তদন্ত নেওয়ার পর তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। সিআইডির সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার শংকর কুমার দাস। তিনি ২০১৭ সালের শেষ দিকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তী সময়ে মামলার বাদী চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেন।

শুনানি শেষে আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ময়মনসিংহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেন। ওই সময় পরিদর্শক আবুল কাশেম তা তদন্ত করেন। এরপর গত বছর মামলাটির দায়িত্ব পান পিবিআই নেত্রকোনা কার্যালয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ জাকির হোসেন।

মামলার বর্তমান অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ জাকির বলেন, খুনের প্রয়োজনীয় আলামত তখন সংরক্ষণ না করায় মামলাটি নিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তবে ডাকাতিসহ সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত চালানো হচ্ছে। আশা করছেন এ রহস্য তাঁরা দ্রুত উদ্‌ঘাটন করতে সক্ষম হবেন।

মামলার বাদী সুজিত কুমার সাহা বলেন, ‘এ পর্যন্ত পাঁচবার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা শুধু বলেন, আরও সময় লাগবে। বিষয়টি নিয়ে হতাশ হচ্ছি। বাবা-মাকে তো আর কখনো পাব না। আমি চাই এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটিত হোক।’