মেহেরপুরের গাংনী
৭ কোটি টাকা নিয়ে উধাও
সমিতিটির শুধু ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়ার এখতিয়ার থাকলেও কোনো প্রকার আমানত গ্রহণ করার এখতিয়ার নেই।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামের একটি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের আমানতের সাত কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। এমন একাধিক অভিযোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকেরা হাজির হচ্ছেন গাংনী উপজেলা সমবায় কার্যালয়ে।
জেলা সমবায় অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তাদের কাছ থেকে স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামের প্রতিষ্ঠানটির বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) হিসেবে নিবন্ধন নেওয়া আছে। তবে সমিতিটির শুধু ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে। কোনো প্রকার আমানত গ্রহণ করার এখতিয়ার নেই।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১১ বছর ধরে স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। আস্তে আস্তে এনজিওটি মানুষের আস্থা অর্জন করে উচ্চ হারে সুদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমানত সংগ্রহ করে। এভাবে এলাকার মানুষের কাছ থেকে সাত কোটি টাকা নিয়ে সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপক মাহিরুল ইসলাম সম্প্রতি কার্যালয়ে তালা দিয়ে সটকে পড়েন। ঘটনা জানাজানি হলে গ্রাহকেরা এনজিও কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ওই গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী সবুর ইসলাম বলেন, ‘ওই এনজিও মাসে এক লাখে দুই হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে আমানত সংগ্রহ করে। আমি বাড়ির গরু বিক্রি করে ৬ লাখ টাকা রেখেছিলাম এক বছর আগে। এখন শুনছি, এনজিও ব্যবস্থাপক টাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছেন।’
সমিতির কার্যালয়ে এসেছিলেন গ্রাহক মাকছুদা খাতুন। তিনি বলেন, গরু ও ছাগল পালন করে টাকা জমিয়ে স্বর্ণালী সমবায় সমিতিতে একটু লাভের আশায় জমা করেছিলেন। জীবনের শেষ সম্বলটুকুও রাখতে পারলেন না বলে কান্না শুরু করেন তিনি।
ভুক্তভোগী চারজন নারী বলেন, এভাবে প্রায় ১৯৬ জনের কাছ থেকে ৭ কোটি টাকার বেশি সংগ্রহ করে ফেলে এনজিওটি। জানুয়ারি থেকে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার কথা ছিল। সেভাবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা এলাকা ঘুরে পুনরায় ঋণ চালুর জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। তবে এক মাস হলো সমিতিটি তালাবদ্ধ। সমিতির স্থানীয় কর্মকর্তারা কিছু বলতে পারছেন না। সারা জীবনের সঞ্চয় এভাবে খোয়া যাবে, প্রশাসন কি কিছুই করতে পারবে না?
যোগাযোগ করা হলে এনজিওটির ঋণ গ্রহণ ও উত্তোলন কর্মকর্তা মেহের আলী বলেন,
‘মাসিক বেতনে আমরা প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করি। তিন সপ্তাহ যাবৎ এনজিওটির ব্যবস্থাপক মাহিরুল ইসলামের মুঠোফোনে কোনো প্রকার যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন শুনছি, তিনি গ্রাহকের আমানতের টাকাগুলো নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। আমাদের গত চার মাসের বেতন পাওনা রয়েছে।’
অনেক চেষ্টার পর গত মঙ্গলবার মুঠোফোনে পাওয়া যায় এনজিওর পলাতক ব্যবস্থাপক মাহিরুল ইসলামকে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ একটি সমস্যা তৈরি হওয়ার কারণে এলাকায় ফিরতে পারছি না। গ্রাহকেরা উত্তেজিত অবস্থায় রয়েছেন। তা ছাড়া শারীরিকভাবে অসুস্থ রয়েছি। পরিস্থিতি ঠিক হলে এলাকায় ফিরে গ্রাহকের টাকা কমবেশি করে ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করব।’
গাংনী উপজেলা এনজিও ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু জাফর বলেন, চলমান একটি সমবায় সমিতি এভাবে দিনদুপুরে গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেল। এ ঘটনায় জেলা সমবায় কার্যালয় আইনগত ব্যবস্থা নেবে। গাংনী থানায় আমানত জমাদানকারীরা মামলা করতে চাইলে তাঁদের আইনি সহায়তা করা হবে। জেলা সমবায় কর্মকর্তা প্রভাষ চন্দ্র বালা বলেন, সমিতির ব্যবস্থাপক অবৈধ পন্থায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অতিমাত্রায় সুদ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।