রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ আজ শনিবার বেলা ২টা থেকে শুরু হবে। বিকেল ৫টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করতে হবে। এই সমাবেশ ঘিরে ১০ দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে উত্তরাঞ্চলে চলছে যাত্রী পরিবহন ধর্মঘট। এই ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে এসে শোনা যাচ্ছে, আজ শনিবার বিএনপির সমাবেশ শেষে সন্ধ্যা থেকে বাস চলাচল করবে।
এ বিষয়ে পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, তাঁদের ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের জন্য। তাঁদের দাবিদাওয়া মেনে নিলেই তাঁরা ধর্মঘট স্থগিত করবেন। তবে পরিবহন শ্রমিকেরা বলছেন, তাঁদের সন্ধ্যা ছয়টা থেকে গাড়ি ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার সকালে রাজশাহী নগরের শিরোইল এলাকায় এ এইচ এম কামারুজ্জামান বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, গাড়ির চালক ও কর্মচারীরা গাড়ি পরিষ্কার করছেন। অনেকে গাড়ি চালু করে পরীক্ষা করছেন। পরিবহনশ্রমিকদের একদল রোদে বসে বিএনপির আজকের সমাবেশ নিয়ে আলাপ করছেন।
এই টার্মিনালে গাড়িচালক মো. সুমন বলেন, বিএনপির সমাবেশ শেষে আজ সন্ধ্যা ছয়টা থেকে বাস চলবে। মালিক সমিতি থেকে তাঁদের এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাঁর গাড়ি রিজার্ভের জন্য ইতিমধ্যে বিএনপির লোকজন যোগাযোগ করছে। নওগাঁ রোডে গাড়িচালক মো. বাবর আলী। ওই টার্মিনালে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, তাঁদের গাড়ি প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। গাড়ি সন্ধ্যা ছয়টায় ছাড়বে।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁরা ধর্মঘটেই আছেন। তাঁরা বিভাগীয় কমিশনারকে তাঁদের ১০ দফা দাবির বিষয়টি বলেছিলেন। এখন পর্যন্ত আলোচনা হয়নি। তবে আজ বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে আলোচনা হতে পারে।
বাসচালকেরা ইতিমধ্যে গাড়ি রিজার্ভ দেওয়া শুরু করেছেন, এমন তথ্য জানালে তিনি বলেন, তাঁরা হয়তো ভেতরে-ভেতরে রিজার্ভ দিচ্ছেন। বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে এ বিষয়ে একটা সম্ভাবনা আছে।
এদিকে যাত্রী পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে দ্বিতীয় দিন থেকে রাজশাহীতে চলছে সিএনজি-থ্রি-হুইলার ধর্মঘটও। এতে দ্বিতীয় দিন থেকে মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে তাঁদের গন্তব্যে ফিরতে হয়েছে। ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে ছয় সিটের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও দুই সিটের রিকশাই ভরসা। এদিনও দেখা গেছে, এই দুই গাড়িতে করে ভেঙে ভেঙে মানুষ জরুরি কাজে বের হচ্ছেন।
নগরের তালাইমারী এলাকায় কথা হয় আবদুস সালামের সঙ্গে। তিনি বানেশ্বর থেকে রাজশাহী শহরে গিয়ে একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করেন। সকাল ৯টায় তাঁর কাজে প্রবেশের সময়। তিনি ৯টায় কাজলায় নামেন একটি অটোরিকশা থেকে। এরপর সেখান থেকে রিকশা নেন। তিনি বলেন, বানেশ্বর থেকে তাঁর আসতে খরচ হলো ১০০ টাকার বেশি। এমনিই স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া ২০ টাকা। তাঁর ধারণা, বিএনপির ধর্মঘট শেষে পরিবহন চালু হবে।
নগরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ টহল, বিএনপি নেতা-কর্মীরা আসছেন
বিএনপির এই সমাবেশকে সামনে রেখে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ মোট ১৭টি স্থানে তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে। এ ছাড়া এ উপলক্ষে পুলিশের বিভিন্ন শাখার দেড় হাজার অতিরিক্ত পুলিশ কাজ করছেন। তল্লাশিচৌকির বাইরে নগরের মোড়ে মোড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশের অবস্থান রয়েছে। এসব স্থান দিয়ে সকাল থেকেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে রাজশাহী মহানগরের বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনকে দেখা গেছে। নগরের সাগরপাড়া এলাকায় ধানের শীষ নিয়ে ১০-১৫ জনের একটি দল হেঁটে যাচ্ছিল। এদের একজন রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁদের বাড়ি সাগরপাড়া এলাকায়। তাঁরা হেঁটেই যাচ্ছেন। সমাবেশস্থলের আগে গিয়ে স্লোগান ধরবেন।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. রফিকুল আলম বলেন, তাঁরা মানুষের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন।