৪ জানুয়ারি গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন উপলক্ষে গণসংযোগ করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান। রোববার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মাত্র ৯ দিন পর আগামী ৪ জানুয়ারি গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গত ১২ অক্টোবর এ আসনে ভোট গ্রহণের মাঝপথে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ায় ভোট বন্ধ করে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর ৬ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের নতুন দিনক্ষণ ঘোষণা করে ইসি। এর পরপরই মাঠে নামে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি (জাপা) মাঠে নেমেছে গত শুক্রবার থেকে। এরই মধ্যে ইসির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান। আজ রোববার বগুড়ায় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন।

আরও পড়ুন

গাইবান্ধা ৫ আসনে উপনির্বাচনে ভোট ৪ জানুয়ারি

সরেজমিনে ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনী প্রচারণা এখনো তেমন জমে ওঠেনি। চায়ের দোকানে আলোচনা আছে। তবে ভোটারদের মধ্যে তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই। প্রার্থীদের মাইকিং চলছে। ১২ অক্টোবরের নির্বাচনের মতো সেভাবে পোস্টারও চোখে পড়েনি। কিন্তু প্রার্থী ও তাঁদের কর্মীদের তৎপরতা আছে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান বলেন, ‘কমিশনের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। পুনরায় ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণের পর ১৫ ডিসেম্বর থেকে প্রচারণা চালাচ্ছি। গ্রামে গ্রামে গণসংযোগ করছি। ছাত্রজীবন থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সুখে-দুঃখে ভোটারদের পাশে ছিলাম, আছি, থাকব।’

উপনির্বাচন উপলক্ষে গণসংযোগ করছেন জাতীয় পার্টির প্রাথী গোলাম শহীদ। রোববার ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়িঘাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে ১৫ ডিসেম্বর থেকে ইসি প্রচারণার কথা বললেও মাঠে ছিলেন না জাপার প্রার্থী গোলাম শহীদ। শুক্রবার থেকে তিনি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, গণসংযোগ চালাচ্ছেন। বিকল্পধারার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবুর রহমানও প্রচারণায় নেমেছেন। জাপার প্রার্থী গোলাম শহীদ বলেন, ‘৪ জানুয়ারির নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে, নাকি ১২ অক্টোবরের মতো হবে, তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ ছিল। তাই এত দিন প্রচারণা চালাইনি। এখন কেন্দ্রের নির্দেশনা পেয়ে প্রচারণায় নেমেছি। আমি আশাবাদী, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে বিজয়ী হব।’

আরও পড়ুন

ইসির তদন্ত কতটা ফল দেবে

সরে দাঁড়ালেন আপেল প্রতীকের প্রার্থী

‘ভোট ডাকাতদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ইসি আবার কারচুপির মাধ্যমে ৪ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান। আজ বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে প্রহসনের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে পুনঃ তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে সাঘাটা ও ফুলছড়িবাসীর ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে নাহিদুজ্জামান বলেন, ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ইসি। কিন্তু বাস্তবে ১২ অক্টোবরের নির্বাচন ভোট ডাকাতির কলঙ্কজনক ইতিহাস গড়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর কর্মীদের জোরজবরদস্তি, হুমকি-ধমকি, মারধর ও কেন্দ্র দখলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজেও কেন্দ্রে ভোট ডাকাত পড়েছিল বলে স্বীকার করেছেন। কিন্তু চিহ্নিত ভোট ডাকাতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ৪ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা কমিশনের আরেকটি প্রহসন।

আরও পড়ুন

গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে অনিয়ম: ১৩৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে ইসি

ইসির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান। রোববার বগুড়া প্রেসক্লাবে
ছবি: প্রথম আলো

আপেল প্রতীকের প্রার্থী নাহিদুজ্জামান আরও বলেন, ইসি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মতামত না নিয়ে ৪ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনে ব্যস্ত। এ নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানে কমিশনের পাতানো ফাঁদে পা দেওয়া। কর্মী-সমর্থকদের বিপদে ফেলে দেওয়া, সাজানো মামলায় হয়রানির মুখে ঠেলে দেওয়া। প্রহসনের নির্বাচনের ফাঁদে পা দেওয়া মানেই জামানত হারানো। একজন সম্মানিত নাগরিক হিসেবে কমিশনের এ প্রহসনের খেলার দাবার গুটি হতে পারেন না। তাই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এদিকে পুনর্ঘোষিত উপনির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে ভোটারদের মধ্যে এখনো শঙ্কা কাটেনি। ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার বিভিন্ন পেশার অন্তত ৩৫ জন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা নির্বাচন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

আরও পড়ুন

গাইবান্ধার উপনির্বাচন: এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা নয়তো?

ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া এলাকার কলেজশিক্ষক সাখাওয়াত মিয়া বলেন, ১২ অক্টোবর সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে নির্বাচন বন্ধ করার নজির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় ৪ জানুয়ারির ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হোক, সেটাই ভোটারদের আশা। মাঝপথে যেন ভোট বর্জন ও নির্বাচন স্থগিতের ঘটনা না ঘটে।

ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের ওপারে অবস্থিত। তাঁরা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। সেখানকার মানুষ তথ্যপ্রযুক্তি থেকে পিছিয়ে। ১২ অক্টোবরের উপনির্বাচনের আগে সেখানে ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়টি সেভাবে শেখানো হয়নি। তাই অনেকে সাহায্যকারী নিয়ে ভোট দিতে গেছেন। এবার যেন ইভিএম সম্পর্কে আগেই প্রচারণা চালানো হয়।

আরও পড়ুন

নির্বাচন কমিশনের দিকে তাকিয়ে ভোটাররা, চলছে নানা জল্পনা–কল্পনা

১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের মাঝপথে নির্বাচন বন্ধ করে দেয় ইসি। ভোট চলাকালে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে ৫১টি ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পেয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে অনিয়মের ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ৫১টি কেন্দ্রের ঘটনা তদন্ত করে গত ২৭ অক্টোবর ইসিকে প্রতিবেদন দেয়।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুল মোত্তালিব প্রথম আলোকে বলেন, উপনির্বাচনে সাঘাটা ও ফুলছড়ি বাদে অন্য উপজেলা থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এ নির্বাচনেও ইভিএম ও সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে।

আরও পড়ুন

নির্বাচন কমিশনের ব্যতিক্রমী আচরণে সন্দেহ হওয়াই স্বাভাবিক: সুজন