‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে’ সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে না বাম দলগুলো। ঠিক একই কারণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও এখানে মেয়র পদে প্রার্থী দিচ্ছে না। অথচ গত নির্বাচনেও দলটি প্রার্থী দিয়েছিল। অন্যদিকে, গত বছরের মতো এবারও এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী নির্বাচন করবেন। বাম ও ইসলামি দলগুলোর স্থানীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা গেছে।
গত সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী না দিলেও এবার দলটির তিন নেতা মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর। এসব নেতার বিলবোর্ড, পোস্টার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নগরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক আবু জাফর গত সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে ৯০০ ভোট পান। এবার তাঁর দল নির্বাচনে অংশ নেবে না। তিনি প্রথম আলোক বলেন, ‘প্রহসনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে নির্বাচন কমিশন বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু করতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার ছাড়া এ সরকারের অধীন আমাদের দল কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না।’
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইভিএমে হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে। আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন। ২১ জুন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।
রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাম দলগুলোর সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। বিএনপির মতো জামায়াতে ইসলামীও নির্বাচনের ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখিয়েছে। অথচ গত নির্বাচনে এখানে সিলেট মহানগর জামায়াতের তৎকালীন আমির এহসানুল মাহবুব দলের সিদ্ধান্তে স্বতন্ত্র হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করে ১০ হাজার ৯৫৪ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। ওই নির্বাচনে ২ হাজার ১৯৫ ভোট পেয়েছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন। সে নির্বাচনে বিএনপি–মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করেছিলেন।
জামায়াতে ইসলামী সিটি নির্বাচনে এবার অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সিলেট মহানগর শাখার সেক্রেটারি শাহজাহান আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বর্তমান সরকারের অধীন আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। এরপর কোনো স্থানীয় নির্বাচনে আমরা যোগ দিইনি। তাই এ সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নও উঠে না।’
সিটি নির্বাচনে জামায়াত অংশ না নিলেও সম্প্রতি দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় কমিটির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসানকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মাহমুদুল বলেন, ‘আমাদের দল ইসলাম, দেশ, মানবতা ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাজনীতি করে। তাই জনগণের সেবা করতেই আমরা এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।’
স্থানীয় জাতীয় পার্টির দুজন নেতা জানিয়েছেন, মেয়র পদে এখানে মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নজরুল ইসলামের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে তাঁর পাশাপাশি জাতীয় পার্টির নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান চৌধুরী এবং যুক্তরাজ্য জাতীয় পার্টির সহসভাপতি আবদুস সামাদ মেয়র পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ তিন প্রার্থীর সমর্থনেই নগরে প্রচারণা চলছে।
মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি সভা করে আমাকে এককভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রীয় কমিটিও নিশ্চয়ই আমাকে মূল্যায়ন করে দলীয় মনোনয়ন দেবে বলে বিশ্বাস রাখি। যেহেতু এই সিলেট শহরেই আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি, সমাজসেবা ও ব্যবসা করছি, তাই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তাই মনোনয়ন পেলে দলের পাশাপাশি আমার ব্যক্তি ইমেজও ভোটের মাঠে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
এদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সিলেটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো বাম দলই অংশ নেবে না। এ জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ না থাকাকেই তাঁরা মূল কারণ হিসেবে বলছেন।
সিপিবি সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন সুমন বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার পরিবেশ ও পরিস্থিতি নেই বলে বাম জোট এবং আমাদের দল মনে করি। এ সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। তাই সিটি নির্বাচনে আমরা অংশ নেব না।’
জাসদ সিলেট জেলা শাখার সভাপতি লোকমান আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে কোনো উৎসাহবোধ করছি না। এমনকি মানসিক তাগিদও অনুভব করছি না। তবে নির্বাচনকেন্দ্রিক সামগ্রিক পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’