পেনসিল অর্কিড

শেরপুরের গজনীতে শালগাছে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো পেনসিল অর্কিড
ছবি: ফকির শহীদ

বৃহৎ পরিসরে অর্কিড নিয়ে আলাদা একটি উদ্যান হতে পারে, মালয়েশিয়ার কে এল অর্কিড গার্ডেন না দেখলে সেটা ভাবনায়ও আসত না। অপূর্ব সেই উদ্যান, নান্দনিক তার বিন্যাস। একইভাবে সেখানে বিচিত্র রঙের অসংখ্য জবা ফুল দিয়েও তৈরি করা হয়েছে ‘হিবিসকাস’ গার্ডেন বা জবাজাতীয় ফুলের উদ্যান। অর্কিড উদ্যানে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলগুলো আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে; যার অধিকাংশই বিশেষ পদ্ধতিতে একক প্রজাতি হিসেবে ভূমিতে রেখে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এভাবে অভিন্ন রঙের অনেক ফুলের মনোমুগ্ধকর সমারোহ সেখানে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ভ্যান্ডা জাতের এই অর্কিড মূলত সেখানেই প্রথম দেখি। একসঙ্গে কয়েক শ ফুলের চোখধাঁধানো রং যেকোনো দর্শনার্থীরই মনোযোগ আকর্ষণ করবে।

সম্প্রতি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত শালবনবেষ্টিত পাহাড়ে অর্কিডটি আবার দেখার সুযোগ হলো। প্রাকৃতিক পরিবেশে যা প্রথম হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে। একটি মৃত শালগাছে অনেকগুলো অর্কিড। তা ছাড়া বনের ভেতর অন্যান্য গাছেও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে। এটি সিঙ্গাপুরের জাতীয় ফুল এবং সেখানে ‘ভ্যান্ডা মিস জোয়াকুইম’ নামে পরিচিত। তবে গারো পাহাড়ে স্থানীয়ভাবে পেনসিল অর্কিড নামে বেশি পরিচিত। বাংলাদেশের দীর্ঘতম এই পাহাড়ে নানান প্রজাতির গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদের সন্ধানে প্রায়ই যাওয়া হয়। এই বনের ফুল-পাখি পর্যবেক্ষণ করার একটি দল আছে। সেই দলের অন্যতম সদস্য প্রকৃতিপ্রেমী ফকির শহীদ বনে ঘুরে ঘুরে এই অর্কিডগুলো দেখালেন। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ গ্রন্থের তথ্যমতে, এই অর্কিড সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। তার সঙ্গে এখন শেরপুরের রেকর্ডও যুক্ত হতে পারে।

এরা (Papilionanthe teres) বৃক্ষাশ্রয়ী এবং হামাগুড়ি দিয়ে বেড়ে ওঠা একধরনের বীরুৎ শ্রেণির গাছ। মূল পাতা ৪ মিলিমিটার প্রশস্ত, দেখতে অনেকটা সরু কাঠির মতো। দুই পাশ থেকে বেশ ভালোভাবে মোড়ানো, মাঝখানটা লম্বালম্বিভাবে ফাঁক করা। শাখান্বিত কাণ্ড মাংসল, সরু নলের মতো এবং বৃত্তাকার, ৮ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার দীর্ঘ। মঞ্জরিপত্র প্রতিমুখ এবং ৩ থেকে ৬টি ফুলবিশিষ্ট। মঞ্জরিদণ্ড শৈলশিরাবিশিষ্ট এবং সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৮ সেন্টিমিটার লম্বা। পুষ্পক মঞ্জরিপত্র ডিম্বাকার। ৪ থেকে ১০ সেন্টিমিটার চওড়া ফুলগুলো সুগন্ধি, দীর্ঘস্থায়ী এবং আড়াআড়িভাবে থাকে। পাপড়ির রং সাদা থেকে গোলাপি এবং মাথার দিকটা গাঢ় বেগুনি বা গোলাপি এবং স্পষ্ট শিরাযুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় গোলাকার, কিনারা ঢেউখেলানো এবং গোড়ার দিকটা পাকানো ধরনের। ফুল ও ফলের মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল।

বাংলাদেশ ছাড়াও এই অর্কিড লাওস, ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ চীন থেকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, নেপালের পূর্বাঞ্চল, ভুটান এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত। অন্যান্য অর্কিডের মতো এটি তুলনামূলকভাবে বেশ জনপ্রিয়। সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৫০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় ভালোভাবে জন্মে।