টিমটিমে! ছোট্ট, সুন্দর ও অতিচঞ্চল এক জলজ পাখি। ‘ছোট খেনি’ ও ‘ট্যানটেনে’ নামেও পরিচিত এ পাখি বাগেরহাট-ফকিরহাটে। ওই এলাকায় কমবেশি দেখা মেলে আজও লাল খেনি, ঢেউর, জলছড়ি জল খেনি, বাদামি খেনি ইত্যাদি পাখি। এগুলোর গড়পড়তা নাম ‘খেনি’। ৬০ বছর আগে ঘেরাঞ্চল ছিল না, ছিল বিশাল হাওর, নাম ‘উত্তরের হাওর’। চিত্রা নদী-কালী গাঙ প্রবাহিত ছিল হাওরের বুক চিরে। তখন আসত হাজার হাজার নানা প্রজাতির শীতের পরিযায়ী পাখি। হাটবাজারে বিক্রি হতো প্রকাশ্যে। নানান জাতের খেনি বিক্রি হতো ডজন বা হালি হিসাবে। বিক্রি এখনো হয়, তবে অতি গোপনে। জালফাঁদ, বিষটোপ ও বাঁশিফাঁদসহ ‘মোবাইল ফাঁদে’ পাখি শিকার করা হয় দুর্গম বিলগুলোতে।
যাহোক, সব ধরনের খেনির ভেতরে এই টিমটিমেই সবচেয়ে ছোট। শীতের পরিযায়ী বিরল পাখিটির দেখা মেলে দেশের হাওর-বাঁওড়, জলাশয়, ধানখেত ও বিলসহ অন্যান্য ছোট জলাশয়ে। অতিচতুর, সতর্ক, সাবধানী ও বুদ্ধিমান এ পাখিটি চঞ্চলতা ও দ্রুততায় ডাহুককেও হার মানায়। এগুলোর লাজুকতা যেমন আছে, তেমনই আছে ভয় ভয় ভাব। দর্শনীয় ত্রিকোণাকৃতির পুঁচকে লেজের আগাটা শিল্পিত ভঙ্গিতে দোলাতে থাকে সর্বক্ষণ। মাঝেমধ্যে টিমটিমে দু-তিনটি মিলে শরীরে কাদামাটি মেখে কাত-চিত হয়ে শুয়ে রোদে শুকিয়ে পরে গোসল করে। এ পাখি পরজীবী পোকা মারে। নির্জন দুপুর, খুব ভোর ও শেষ বিকেলে নরম ও মিহি স্বরে এ পাখি যখন ডাকে, তখনকার ভাষাটা ‘চর চর, চির চির, চরর চরর’ ধরনের। স্বাভাবিক ওড়ার সময়ে বা ভয় পেয়ে উড়লে ডাকে টিমটিম স্বরে। এ পাখির সবচেয়ে প্রিয় খাবার কালো রঙের ছোট পাখাওয়ালা জলজ কচড়া পোকা।
টিমটিমের ইংরেজি নাম Baillon’s crake. বৈজ্ঞানিক নাম porzana pusilla. দৈর্ঘ্য ১৮-১৯ সেমি। একনজরে পুরুষ পাখিটি লালচে-জলপাই-বাদামি রঙের। ঘাড়, পিঠ ও ডানার উপরিভাগে চমৎকার বিন্যাস সাদা ছিট; বুক, গলা ও চিবুক ছাই-ধূসর রঙের, ডানার তলার বুক ও পেটের উপরিভাগসহ লেজের তলায় আড়াআড়ি সাদা-কালোর পর্যায়ক্রমিক রেখাগুলো শিল্পিত সুন্দর। এই টানগুলো পাখিটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুণ।