মিঠাপানির সংকটে বন্য প্রাণী

  • ২০১১ সাল পর্যন্ত ভোলার বনাঞ্চলে প্রায় ১১ হাজার বন্য প্রাণী ছিল। বর্তমানের কোনো হিসাব নেই।

  • শুকনা মৌসুমে বনে দেখা দেয় মিঠাপানি ও খাদ্যের সংকট। লোনাপানিতে তৃণ শুকিয়ে যায়।

  • জোয়ারের সময় বন্য প্রাণী নদী সাঁতরে লোকালয়ে চলে এসে শিকারিদের খপ্পরে পড়ে।

হরিণ
সংগৃহীত

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার মোট বনাঞ্চলের অনেক জায়গাই দিন দিন দখল হয়ে যাচ্ছে। সেখানে গড়ে উঠছে জনবসতি। আবার শুকনা মৌসুমে বনে দেখা দেয় মিঠাপানি ও খাদ্যের সংকট। কারণ, লোনাপানিতে বনের তৃণ শুকিয়ে যায়। বর্ষায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে বন্য প্রাণী নদী সাঁতরে লোকালয়ে চলে এসে শিকারিদের খপ্পরে পড়ে। আবার উল্টো চিত্রও আছে। লোকালয়ে আসা হরিণ স্থানীয় লোকজন ধরে বনে ছেড়েও দেন। গত ১০ বছরে লোকালয়ে আসা শতাধিক হরিণ বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অবমুক্ত হয়েছে অসংখ্য কচ্ছপ, মেছো বাঘ ও সাপ।

বেশির ভাগ মানুষই লোকালয়ে হরিণ ধরে আবার বনে ছেড়ে দেন। কিছু প্রভাবশালী শিকারি বন্য প্রাণী শিকার ও বন দখল করেছেন।
তৌফিকুল ইসলাম, উপকূলীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা

জানা যায়, বন্য প্রাণীর জন্য ভোলার বনে নেই কোনো মিঠাপানির ব্যবস্থা। অস্বাভাবিক জোয়ারে বাঁচার জন্য নেই উঁচু কেল্লা। বন ও বন্য প্রাণী রক্ষায় বনপ্রহরী আছেন হাতে গোনা কয়েকজন। ফলে ভোলার বন্য প্রাণী একরকম অরক্ষিত।

চরফ্যাশন উপজেলার কুকরিমুকরি বনকে বলা হয় মিনি সুন্দরবন। এ রেঞ্জের আওতায় আছে দুটি বিট। চরপাতিলা বিটে ছয় থেকে সাত বছর আগে কুকরিমুকরি বনে দুটি পুকুর খনন করা হলেও তা সংস্কারের অভাবে এখন মিঠাপানির সংকট দেখা দিয়েছে। এখানে বন বিভাগের রেঞ্জার, বিট কর্মকর্তা মিলে একসময় ৩৫ জন স্টাফ ছিলেন। বর্তমানে রেঞ্জার-বিট কর্মকর্তাসহ স্টাফ আছেন ১০ জন। কালকিনি বিটে গার্ড আছেন একজন, দুজন মালি, তিনজন মাঝি ও তিন থেকে চারজন বিট কর্মকর্তা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বনের চারপাশে কোনো বাঁধ না থাকায় জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে বনাঞ্চল সহজেই প্লাবিত হয়। এ সময় বন্য প্রাণী লোকালয়ে চলে আসে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। না হলে জোয়ারে ভেসে যায়। হরিণ শিকারের সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। তবে এ কাজে জেলেদের ব্যবহার করা হয়। জেলেরা হরিণ ধরে ট্রলারের মধ্যে জবাই করে প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে দেন।

বন বিভাগ বলছে, তারাও এসব তথ্য জানে। কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে বনে পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না। বনপ্রহরীর মঞ্জুরি করা পদের প্রায় অর্ধেকই শূন্য। অনেক বনে কোনো ক্যাম্পই নেই। ফলে বন পাহারা দেওয়ার কেউ থাকে না।

উপকূলীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম বলেন, বেশির ভাগ মানুষই লোকালয়ে হরিণ ধরে আবার বনে ছেড়ে দেন। কিছু প্রভাবশালী শিকারি বন্য প্রাণী শিকার ও বন দখল করেছেন। কিছু জমি বন বিভাগ ভূমি বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে। বন্য প্রাণী ও বন রক্ষায় যথেষ্ট বনপ্রহরী নিয়োগ, অস্ত্র ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার।