পটিয়ায় সড়কের ওপর গাড়ির স্ট্যান্ড, হকারের দখলে ফুটপাত

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ায় পৌর এলাকায় গড়ে উঠেছে অবৈধ একাধিক গাড়ির স্ট্যান্ড। সড়কের বেশির ভাগ অংশজুড়ে স্ট্যান্ডের গাড়ি রাখায় সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে পথ। ফলে, লেগে থাকছে যানজট। দুর্ভোগে পড়ছে যাত্রীরা। এই জংশন পার হতে বিভিন্ন যানবাহনের আধা ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। এদিকে ফুটপাত চলে গেছে হকারদের দখলে। পথচারীরা চলাচল করে সড়কের ওপর দিয়ে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের পটিয়া কলেজ গেটে বাস, ডাকবাংলো ও উপজেলা পরিষদের সামনে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, থানা থেকে আদালত মোড় পর্যন্ত মাইক্রোবাস এবং মুন্সেফ বাজারে গড়ে উঠেছে রিকশা স্ট্যান্ড। সড়কের ওপরই রাখা হয়েছে এসব স্ট্যান্ডের গাড়ি। ফলে, সরু হয়ে পড়া সড়কে দুই পাশের গাড়ি চলাচলে প্রায় সময় লেগে যাচ্ছে যানজট। চন্দানইশ, বাঁশখালী, লোহাগাড়া, চকরিয়া ও কক্সবাজার রুটের বিভিন্ন বাসের যাত্রীরা যানজটে আটকা পড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এ ছাড়া সড়কের কোথাও ফুটপাত খালি নেই। পুরোটাই হকারের দখলে।
জানা যায়, পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট অঙ্কের কর দিয়ে স্ট্যান্ডগুলো গড়ে উঠেছে। ফলে, পৌর কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদে কোনো আগ্রহ দেখায় না।
পটিয়া অটো টেম্পো, ট্যাক্সি, সিএনজি শ্রমিক কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি বদিউল আলম বলেন, ‘সড়কের ওপর গাড়ি রাখায় যানজট হচ্ছে এটা ঠিক। কিন্তু আমরা কোথায় যাব? আমাদের স্থায়ী একটি জায়গা দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে পৌর মেয়রকে স্মারকলিপি দিয়েছি। তা ছাড়া বর্তমানে দৈনিক ভিত্তিতে গাড়িপ্রতি কর দিচ্ছি পৌরসভাকে।’
উপজেলা প্রাশসন সূত্র জানায়, ৬ জুলাই পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোকেয়া পারভীন পটিয়া সদরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে স্টেশন সড়ক এলাকার ১৫ জন দোকানিকে জরিমানা করেন। ফুটপাত দখল করে পণ্যের পসরা নিয়ে বসায় তাঁদের ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে গাড়ির স্ট্যান্ড উচ্ছেদে এখনো কোনো অভিযান চালানো হয়নি। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের যাত্রীবাহী বাসের চালক হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘পটিয়া পৌর শহর জংশন পার হতে আধা ঘণ্টার বেশি লাগে। অথচ রাস্তা পরিষ্কার থাকলে এটা পাঁচ মিনিটের পথ। কিন্তু যেভাবে সড়কের ওপর গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়, তার জন্য এগোতে পারি না।’
হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রফিক আহমেদ মজুমদার জানান, যানজট নিরসনে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার ওপর ফুটপাত হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় পথচারীরা সড়কের ওপর দিয়ে চলাচল করেন। ফলে, ঘটছে দুর্ঘটনা।
পটিয়া আবদুর রহমান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, ‘ডাকবাংলো এলাকায় ট্রাকের চাপা পড়ে ২০১০ সালে প্রিয়া চৌধুরী
নামে আমাদের বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী মারা যায়। ২০০৮ সালে একই স্থানে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী কাজী মাবিয়া মুনতাহা গুরুতর আহত হলে ২০০৯ সালে সে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি।’
পটিয়া দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এম এ ইউসুফ বলেন, সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে গত ১২ জুন সমিতির পক্ষ থেকে পৌর মেয়রকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে পৌরসভার মেয়র হারুনুর রশিদ বলেন, সড়ক ও ফুটপাতের ওপর থেকে দোকান ও যানবাহন অপসারণের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব স্ট্যান্ড থেকে পৌরসভার কর আদায় সম্পর্কে বলেন, এসব স্ট্যান্ড যখন বসেই গেছে, তখন কর আদায় করা ছাড়া আর উপায় নেই। অবশ্য একটি বাস স্ট্যান্ডের নির্মাণকাজ চলছে।
উপজেলা ইউএনও রোকেয়া পারভীন বলেন, গাড়ির অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে শিগগির অভিযান চালানো হবে।