আইনস্টাইন ও আমার বন্ধু

পৃথিবী বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন নাকি মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে জার্মান ভাষায় কিছু একটা বলেছিলেন। সেটার কিছুই বুঝতে পারেননি উপস্থিত নার্স, কারণ তিনি জার্মান ভাষা জানতেন না। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তাঁর লাল চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হয়েছে—কেন তিনি জার্মান ভাষা জানলেন না, নিশ্চয়ই এই মহাবিজ্ঞানী গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলেছিলেন, তাঁর কারণে পৃথিবীর মানুষ তা জানতে পারল না। পরে সেই জার্মান না-জানা নার্স জার্মান ভাষা শিখে আইনস্টাইনের ওপর একটি বই লেখেন, সেই বই জার্মানে এখন বেস্ট সেলার!

প্রিয় পাঠক, এই লেখার প্রথমাংশ সত্য, পরের অংশ আমার উর্বর মস্তিষ্কের (!) কল্পনাপ্রসূত। কারণ আইনস্টাইন স্বয়ং বলেছেন, ‘জ্ঞানের চেয়ে কল্পনাই শক্তিশালী (এই কথাটা অবশ্য তিনি অনেকভাবেই বলেছেন—Imagination is more important than knowledgs ev The true sign of intelligence is not knowledge but imagination.)।’ কাজেই ওই নার্স জার্মান ভাষায় আইনস্টাইন নিয়ে বই না লিখলেও আমার কল্পনা করতে দোষ কোথায়?

আইনস্টাইন থাকুক, এবার আসি আইনগাইনস্টাইনে। ‘আইনগাইনস্টাইন’ নামটা অবশ্য আমার দেওয়া। আমার কাছে এক তরুণ আসত, তার নাম আইনুল, সে দুবার বিএ ফেল করেছে এবং তৃতীয়বারও ফেল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সে একজন বিজ্ঞানী। নানা বিষয় নিয়ে তার গবেষণা। তার ধারণা, সে মফস্বলে থাকে বলে তার মূল্যায়ন হচ্ছে না, ঢাকায় থাকলে বিজ্ঞানী হিসেবে এত দিনে সে লাইমলাইটে চলে আসতে পারত। আমি বললাম, ‘তুমি আর্টসের ছাত্র তুমি বিজ্ঞানী হও কীভাবে?’

এই খানেই তো স্যার আপনাদের ভুল

মানে?

আপেলের ভেতর যে পোকা থাকে সে কি কখনো আপেলের স্বাদ টের পায়? এই জন্যই তো আর্টসে পড়ে বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করছি।

বেশ ভালো। আমি হতাশ হয়ে সায় দিই।  

কার্টুন
কার্টুন

আমাদের আইনগাইনস্টাইনের আবিষ্কারের কোনো সীমা সংখ্যা নেই। তার সর্বশেষ আবিষ্কার...যা এখনো গবেষণা পর্যায়ে আছে, সেটা হচ্ছে ‘এসি শার্ট’। সে একটা শার্ট বানাচ্ছে, যে শার্ট গায়ে দিলে গরম লাগবে না, এসির বাতাসের মতো শরীর ঠান্ডা মেরে যাবে। আমি তাকে ডাকতাম আইনগাইনস্টাইন নামে। আমার ধারণা ছিল এই নাম শুনে সে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে, পরে দেখা গেল, না, এই নামে সে বেশ প্রীত।

তোমার এসি শার্টের খবর কী? একদিন জিজ্ঞেস করলাম।

সেটা নিয়ে বড় সমস্যা হয়েছে। গম্ভীর কণ্ঠে জানাল সে।

কী সমস্যা?  এর উত্তরে সে বলল, পরীক্ষামূলকভাবে আবিষ্কৃত প্রথম এসি শার্ট তার একমাত্র ছোট মামাকে পরতে দিয়েছিল, (বড় মামা তার আরেক গবেষণার গিনিপিগ হয়ে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেছেন অনেক আগেই!) তো সেই ছোট মামা এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। কারণ ঠান্ডায় নাকি তাঁর সিভিয়ার নিউমোনিয়া হয়ে গেছে, নিউমোনিয়া কিছুতেই সারছে না।

শেষ খবর যেটা পাওয়া গেছে সেটা হচ্ছে, আইনগাইনস্টাইন...মানে বিজ্ঞানী আইনুল তৃতীয়বারেও কৃতিত্ব্বের সঙ্গে বিএ ফেল করলেও ‘বিয়ে’ পাস করেছে...তার বিয়ে করা নাকি বিশেষ জরুরি ছিল, কারণ সে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বই লিখতে শুরু করেছে, যার ‘স্বত্ব’-এ স্ত্রীর নাম দেওয়া জরুরি (বড় বড় লেখকের বইয়ে যেমন থাকে) বইয়ের শিরোনাম ‘এক চান্সে পরীক্ষা পাসের ১০১টি উপায়’। আমাকে অনুরোধ করেছে একজন প্রকাশক জোগাড় করে দিতে। তার ধারণা, এই বই প্রকাশিত হলেই তার বিএ পাস স্বয়ং আইনস্টাইনও ঠেকাতে পারবেন না।

আইনস্টাইনকে নিয়ে যত মজার গল্প আছে সেসব নিয়ে এত বেশি লেখালেখি হয়েছে যে সব ঘটনাই সবার জানা। তারপরও একটা গল্প আমার বেশ ভালো লাগে।

আইনস্টাইন একবার কোথায় যেন বেড়াতে গিয়েছিলেন বা কাজেই গিয়েছিলেন। তিনি জাহাজে করে ফিরে যাবেন। সবাই এসেছে জাহাজঘাটে আইনস্টাইনকে বিদায় জানাতে। একজন এসেছে তার ছোট বাচ্চাকে নিয়ে। আইনস্টাইন আদর করে বাচ্চার গাল টিপে দিতেই বাচ্চা হাত-পা ছুড়ে তীব্র কান্না জুড়ে দিল। আইনস্টাইন হাসিমুখে বললেন, ‘এই শিশুটিই মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত আমার সঠিক মূল্যায়ন করল...!’ বাচ্চাদের সম্পর্কে দেওয়া তাঁর একটা মন্তব্য দিয়ে শেষ করি, ‘তুমি যদি ছয় বছরের বাচ্চাকে কোনো একটা বিষয় বোঝাতে না পারো তাহলে বুঝবে বিষয়টি তুমি নিজেও বোঝনি!’

লেখক: রম্য লেখক