আলোর ভুবনে

আলো কণাকে বা আলোক তরঙ্গকে আসলে আমরা দেখতে পাই না। আমাদের মস্তিষ্কে একটি বস্তুর প্রতিচ্ছবি তখনই সৃষ্টি হয় যখন তার পৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত আলো আমাদের চোখে পৌঁছায়। তাই কোনো বস্তুকে দেখতে হলে তার ওপর আলো ফেলতে হবে। তাহলে আলোকে দেখতে হলে কি তার ওপর আলো ফেলতে হবে না? কিন্তু শূন্য স্থানে আলো সাধারণত আলোর সঙ্গে বিক্রিয়া করে না, দুটি টর্চের আলোক স্তম্ভ আড়াআড়িভাবে স্থাপন করলেও একে অপরকে অগ্রাহ্য করে বেরিয়ে যেতে পারে। টর্চের আলোর ফোটন কণিকারা (বা আলোক তরঙ্গ) যে একে অপরের সঙ্গে একেবারেই বিক্রিয়া করে না এমন নয়, কিন্তু এই বিক্রিয়া খুবই ক্ষণস্থায়ী। এতে শক্তি বা ভরবেগের আদান-প্রদান হয় না। আলোক কণিকারা যদি শূন্য স্থানে একে অপরের সঙ্গে বিক্রিয়া করত তাহলে বাস্তব জগতের কোনো কিছুই আমরা সঠিকভাবে দেখতে পেতাম না। আলোর শক্তিকে আমরা রেটিনায় অনুভব করি। আলোকে আমরা দেখি না, কিন্তু আলোর শক্তিকে অনুভব করি। সেই শক্তিকে অনুভব করতে হলে আলোক কণিকাকে ধ্বংস করতে হবে। আমাদের চোখের রেটিনায় আলোর তরঙ্গ যখন পড়ে সেই তরঙ্গের শক্তি রেটিনার বিভিন্ন ধরনের কোষ, যেমন রড ও তিন ধরনের কোন গ্রহণ করে। এতে একধরনের তড়িত্প্রবাহ সৃষ্টি হয় । বলতে গেলে আপতিত আলো ধ্বংস হয়ে যায়। আমাদের মস্তিষ্ক বিভিন্ন ধরনের কোষের সংকেত আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করে আমাদের চেতনায় রঙের সৃষ্টি করে। সে রঙের সঙ্গে বস্তুজগতের আলোর সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। বলা চলে আমরা যে রং দেখি সেটা আলোর প্রতিনিধিমাত্র। 

আলো এখনো আমাদের অচেনা

আলো এক দিক থেকে যেমন আমাদের সবচেয়ে পরিচিত জিনিস, অন্যদিকে সেটাই আবার সবচেয়ে অজানা। আলোকে আমরা কখনো দেখি তড়িত্চুম্বকীয় তরঙ্গ হিসেবে। কখনো দেখি ফোটন কণা রূপে। এই দুটি রূপেই আলো বর্তমান। সেই দুই ধরনের পরিচয়ের দ্বন্দ্বে আমাদের চেনা জগত্টা হঠাত্ করেই হয়ে ওঠে অচেনা, রহস্যময়। কীভাবে একটা জিনিসকে একসঙ্গে দুভাবে ভাবা যায়, সেটা একটা বড় রহস্য। এ রহস্যের যে একটা সহজ সমাধান আছে এমনও নয়।

বস্তুকে দৃশ্যমান করার দায়িত্ব আলোর নয়

মহাবিশ্বে আলো ছুটে বেড়াচ্ছে আজ প্রায় ১৩,৮০০ কোটি বছর ধরে। ছুটে বেড়াচ্ছে বললে ভুল হবে, সৃষ্টি ও ধ্বংস হচ্ছে। কোটি কোটি বছর ধরে কিন্তু সেই আলোর কোনো দায়িত্ব ছিল না বস্তুকে দৃশ্যমান করার। শুধু তখনই যখন প্রাণের আবির্ভাব ঘটল, সেই প্রাণ আলোকে বেছে নিল তার চারদিকের জগেক মূর্তমান করতে।

আলোর ইতিহাস

তাহলে আলোর ইতিহাস কি শুরু হবে যখন প্রাণীরা আলোকে ব্যবহার করতে শুরু করল তখন থেকে, নাকি মহাবিশ্বে যখন প্রথম ফোটন কণিকা আবির্ভূত হলো তখন থেকে? ফোটন কণিকা কখন ফোটন হিসেবে দেখা দিল আমাদের এই মহাজগতে? 

চারটি মৌলিক মিথস্ক্রিয়া

ফোটন কণা আবির্ভাবের কথা বলতে হলে মৌলিক বল সম্পর্কে কিছু বলা দরকার। প্রকৃতির সমস্ত ক্রিয়াকলাপকে চারটি মৌলিক বল বা মিথস্ক্রিয়া দিয়ে বর্ণনা করা সম্ভব। এর মধ্যে মাধ্যাকর্ষণ ও তড়িত্চুম্বকীয় মিথস্ক্রিয়া আমাদের অতিপরিচিত। মাধ্যাকর্ষণ বা মহাকর্ষ বল বড় বড় বস্তুকে আকর্ষণে আটকে রেখেছে যেমন পৃথিবী, অন্যান্য গ্রহ ও সূর্য নিয়ে আমাদের সৌরমণ্ডল। আবার পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ আমাদের পৃথিবীর বুকে চলাফেরা করতে সাহায্য করছে। তেমনিভাবে তড়িত্চুম্বকীয় বলের তড়িত্ অংশের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আধানের পারস্পরিক আকর্ষণে আমাদের জৈবিক দেহ থেকে আরম্ভ করে সমস্ত ধরনের বস্তু যেমন: চেয়ার, টেবিল, দেয়াল, বাড়ি ইত্যাদি তাদের গঠনকে ধরে রাখতে পারে।

সবল নিউক্লিয় বল

মাধ্যাকর্ষণ ও তড়িত্চুম্বকীয় বল ছাড়া অন্য দুটি বলের নাম আমাদের খুব পরিচিত নয়, তবে আমাদের অস্তিত্বের জন্য তারা অপরিহার্য। এর মধ্যে একটি হলো সবল নিউক্লিয় মিথস্ক্রিয়া। পরমাণুর কেন্দ্রে প্রোটন-প্রোটন, প্রোটন-নিউট্রন ও নিউট্রন-নিউট্রন আকর্ষণের জন্য সবল বলই দায়ী। আসলে প্রোটন ও নিউট্রনে অবস্থিত কোয়ার্কসমূহের মধ্যে মিথস্ক্রিয়াই সবল বলের মূল কাজ, এই মিথস্ক্রিয়ার অবশিষ্ট বা আনুষঙ্গিক প্রভাবই পরমাণুর কেন্দ্রে প্রোটন ও নিউট্রনসমূহকে একত্র করে রেখেছে।

দুর্বল নিউক্লিয় মিথস্ক্রিয়া

চতুর্থ নম্বর মিথস্ক্রিয়া দুর্বল নিউক্লিয় বল কোনো আকর্ষণ বা বিকর্ষণের জন্য দায়ী নয়, বরং একটি মৌল কণার অন্য একটি মৌল কণায় অবক্ষয়ের জন্য এটি কাজ করে। যেমন তেজস্ক্রিয় অবক্ষয়ের সময় পরমাণুর অভ্যন্তরে একটি নিউট্রন কণা একটি প্রোটন, একটি ইলেকট্রন ও একটি প্রতি-নিউট্রিনো কণায় রূপান্তরিত হয়।

অনুরূপভাবে একটি প্রোটন একটি নিউট্রন, একটি পজিট্রন (বা প্রতি-ইলেকট্রন) ও একটি নিউট্রিনো কণায় রূপান্তরিত হয়। এই রূপান্তরগুলোর জন্য দুর্বল বল দায়ী। সূর্যের অভ্যন্তরে শেষোক্ত অবক্ষয়টি হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম ও শক্তি সৃষ্টি করছে। কাজেই সূর্য থেকে আগত সমস্ত শক্তির জন্য আমরা দুর্বল মিথষ্ক্রিয়ার কাছে ঋণী।  

কোনো একসময়ে সব বল একীভূত ছিল

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে একটা বড় ধরনের বিস্ফোরণ বা ঘটনার মাধ্যমে, যাকে তাঁরা অভিহিত করছেন বিগ ব্যাং বলে। সেই সৃষ্টির মুহূর্তে সব বল একীভূত ছিল বা শুধু একধরনের মিথষ্ক্রিয়াই বহাল ছিল। এরপরে মহাবিশ্বের প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রার পতন ঘটতে থাকে এবং এই বলগুলোও একে অপরের থেকে পৃথক হয়ে যায়। বিগ ব্যাংয়ের প্রায় পরপরই মহাকর্ষ ও নিউক্লিয় সবল মিথষ্ক্রিয়া আলাদা হয়ে যায়। এরপরে তড়িত্চুম্বকীয় বল ও দুর্বল বল কিছুক্ষণ একসঙ্গে ছিল। কিছুক্ষণ বলছি, আসলে সেটা এক সেকেন্ডের একটা ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র। সেই সময় ফোটন বা আলোর কণা বলে আলাদা কিছু ছিল না।

আইসোস্পিন ও হাইপারচার্জ মিথষ্ক্রিয়া

ইতিমধ্যে সব ধরনের কোয়ার্ক, লেপটন ও নিউট্রিনো কণা সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু তাদের কোনো ভর ছিল না। ততক্ষণে কোয়ার্ক কণাগুলোর মধ্যে সবল  মিথষ্ক্রিয়া কাজ করছিল, অন্যদিকে তড়িত্চুম্বকীয় বল ও নিউক্লিয় দুর্বল বল তখন আইসোস্পিন ও হাইপারচার্জ নামে দুটি বলের সমষ্টি ছিল। 

ফোটনের আবির্ভাব

তখনো ফোটন বলে কিছু ছিল না, শুধু আইসোস্পিন ও হাইপারচার্জ মিথষ্ক্রিয়াকে সম্পন্ন করানোর জন্য ছিল  ড+, ড-, ড০ ও ঢ নামে চারটি ভরহীন পরিবাহী বোসন কণা। এদের ইংরেজিতে বলা হয় ভড়ত্পব পধত্ত্রবত্। কিন্তু এরপরে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাম্যাবস্থার পরিবর্তন হয় যে ওই চারটি ভরহীন পরিবাহী বোসন কণার বদলে ড+, ড- ও  ত০ নামে ভরসম্পন্ন তিনটি পরিবাহী কণার সৃষ্টি হয় (যারা কিনা দুর্বল মিথষ্ক্রিয়ার জন্য দায়ী) এবং একটি ভরশূন্য কণার সৃষ্টি হয় (যেটা কিনা তড়িত্চুম্বকীয় মিথষ্ক্রিয়ার জন্য দায়ী)। এই শেষোক্ত কণাকে আমরা ফোটন বলে জানি।  

তাপমাত্রা পতনের পর ফোটন সৃষ্টি

বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাবিশ্ব একধরনের স্কেলার ক্ষেত্র (অর্থাত্ যে ক্ষেত্রের প্রতিটি স্থান-বিন্দুতে মান আছে কিন্তু কোনো দিকনির্দেশ নেই) দিয়ে পূর্ণ। তাঁরা এই ক্ষেত্রের নাম দিয়েছেন হিগস ক্ষেত্র।

মহাবিশ্ব সৃষ্টির পরমুহূর্তে হিগস ক্ষেত্রের মান সব জায়গায় শূন্য ছিল, কিন্তু তাপমাত্রা পতনের সঙ্গে সঙ্গে সেটির মান শূন্য থাকে না। এটাকে ইংরেজিতে ংঢ়ড়হঃধহবড়ঁং ংুসসবঃত্ু নত্বধশরহম বলে, বাংলায় স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিসাম্য ভাঙন বলা যেতে পারে। সেই অশূন্য হিগস ক্ষেত্রের সঙ্গে বিক্রিয়া করে চারটি ভরহীন কণার মধ্যে তিনটি ভর অর্জন করে। একটি কণা হিগস ক্ষেত্রের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না। সেটিই ফোটন।  তাহলে ফোটন আবির্ভাবের সময়কালটা কী? হয়তো বিগ ব্যাং হওয়ার ১০-১২ থেকে ১০-৬ সেকেন্ডের মধ্যে। অর্থাত্ মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার পর একটি সেকেন্ডও তখন পার হয়নি।

Big-bang_wbbnya
Big-bang_wbbnya

আদিম ফোটন

বিগ ব্যাংয়ের পরে মহাবিশ্বের প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বস্তুর ঘনত্ব ধীরে ধীরে কমে আসে। কিন্তু তার মধ্যেও আলোর কণিকা বা ফোটন ইলেকট্রনের মেঘের মধ্যে আটকে পড়েছিল। বিগ ব্যাংয়ে সৃষ্ট ফোটন কণাসমূহ ইলেকট্রনের সঙ্গে ক্রমাগত আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে আবদ্ধ ছিল। ধীরে ধীরে মহাবিশ্বের প্রসারণের ফলে তাপমাত্রা কমে আসে। ইলেকট্রন প্রোটনের কক্ষপথে আবদ্ধ হয়ে সৃষ্টি করল হাইড্রোজেন পরমাণুর। প্রথম প্রথম ফোটন কণা সেই পরমাণুগুলোকে আয়নিত করতে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পরে ফোটনের শক্তি কমে যাওয়াতে সেই নিউট্রাল পরমাণুগুলোকে সে আর আয়নিত করতে সক্ষম হলো না। এতে সেই ফোটনগুলো আর ধ্বংস হলো না। এর ফলে বিগ ব্যাংয়ের প্রায় ৩৮০০০০ বছর পরে ফোটনগুলো মুক্ত হলো, সেই ফোটনই প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পরে আজ আমরা ঈড়ংসরপ গরপত্ড়ধািব ইধপশমত্ড়ঁহফ (সিএমবি) বা মহাবিশ্ব অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ হিসেবে পর্যবেক্ষণ করছি। সেই সিএমবি ফোটন যখন বিকিরিত হয়েছিল তখন মহাবিশ্বের ব্যাস আজ থেকে প্রায় এক হাজার গুণ ছোট ছিল। এর মধ্যে মহাবিশ্বের ক্রমাগত সম্প্রসারণের ফলে সিএমবি ফোটনের তাপমাত্রা তাদের আদি ৩০০০ কেলভিন (বা প্রায় ৩০০০ সেলসিয়াস) থেকে ২.৭ কেলভিনে নেমে এসেছে। সিএমবি ফোটন হলো মহাবিশ্বে সবচেয়ে পুরোনো ফোটন।

কিন্তু ফোটন আলো নয়, সে একটি কণিকা মাত্র। তড়িত্চুম্বকীয় (বষবপঃত্ড়সধমহবঃরপ ধািব, ঊগ) তরঙ্গও আলো নয়, সেটি তরঙ্গমাত্র। ফোটন বা ঊ গ তরঙ্গ তখনই আলো যখন প্রাণী সেটির শক্তি অনুভব করে তাকে কাজে লাগায়। কবে থেকে সেই পর্যায়ের শুরু?

প্রাণের সঙ্গে আলোর প্রথম যোগাযোগ

পৃথিবীতে প্রথম জৈবিক প্রাণের সৃষ্টি ও সেই প্রাণ বজায় রাখার জন্য আলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। আজ থেকে ৩.৪ বিলিয়ন বা ৩৪০ কোটি বছর আগে ক্ষুদ্র জীবাণু সায়ানোব্যাকটেরিয়া একধরনের প্রোটিনের সাহায্যে সূর্যের আলো আহরণ করে শর্করা খাদ্য বানাতে আরম্ভ করে। এই সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড অপসারণ করে ও অক্সিজেন সরবরাহ করে। এই পদ্ধতিতে সৃষ্টি হয়েছিল আলোকে অনুভব করার জন্য একধরনের ফটোরিসেপ্টর প্রোটিন, যা কিনা দিন ও রাতের পার্থক্য (সার্কাডিয়ান চক্র) নির্ণয় করতে পারত। এ ধরনের রিসেপ্টর কোষ এখনো আমাদের রেটিনায় বর্তমান। সেগুলো আমাদের সার্কাডিয়ান চক্র বজায় রাখতে সাহায্য করে। 

চোখের আবির্ভাব

কিন্তু চোখের উত্পত্তির জন্য আমাদের আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হলো। এখন আমরা জানি ক্যামব্রিয়ান যুগে—আজ থেকে ৫৪ কোটি বছর আগে প্রচুর প্রজাতির আবির্ভাব হয়। সেই সময়ের মধ্যেই আদিম চোখের আবির্ভাব হয়েছে। গবেষকদের অভিমত, পৃথিবীর বুকে চোখের আবির্ভাব ও পরিবর্তন ভিন্ন ভিন্ন পথে অন্তত ৫০ থেকে ১০০ বার পর্যন্ত হয়েছে (১ নম্বর রেফারেন্স দেখুন)। এখানে মনে রাখতে হবে আলোর জন্য শুধু চোখ থাকলেই হবে না। তাকে দেখা ও বোঝার জন্য মস্তিষ্কে জটিল সার্কিট থাকতে হবে। 

আলোর বোধ আমাদের বিবর্তনে সাহায্য করেছে। তাই ফোটন বা ইএম তরঙ্গ তখনই আলো হয়ে উঠল যখন আমাদের স্নায়ু সেসব তরঙ্গ ব্যবহার করতে শিখল। আলোকে ব্যবহার করে যে বাস্তবতার একটা মডেল তৈরি করা সম্ভব সেটা বিবর্তনের একটা বিরাট সাফল্য। শব্দতরঙ্গকে ধ্বনি ও তড়িত্চুম্বকীয় তরঙ্গকে আলো হিসেবে নির্বাচিত করে প্রাণীরা পৃথিবীর বুকে তাদের অস্তিত্বকে দৃঢ় করল। বিবর্তনের এই ধাপে ফোটন কণিকা বা তড়িত্চুম্বকীয় তরঙ্গকে যদি আলো হিসেবে প্রাণিজগত্ নির্ধারণ না করতে পারত, তবে তার পরিণতি কী হতে পারত বলা মুশকিল। এখানে এটাও নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, আলো না থাকলে জীবনের বিকাশ হতো না। কারণ ফোটন হলো এমন একটি কণিকা, যার শক্তি ইলেকট্রন খুব সহজেই গ্রহণ করতে পারে। আবার যাকে ইলেকট্রন খুব সহজেই বিকিরণ করে শক্তি হ্রাস করতে পারে। ইলেকট্রনের সঙ্গে আলোর এই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকার ব্যাপারটা বিংশ শতাব্দীর কোয়ান্টাম তড়িিবজ্ঞানের অগ্রগতির আগে আমাদের জানা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর জ্ঞান পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। সেই ইতিহাসের আলোচনা আগামীর জন্য তোলা রইল।

সূত্র: অ্যানিমেল আইজ/ ল্যান্ড ও নিলসন।

লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় রিভারসাইড কলেজের অধ্যাপক, নাসার সাবেক গবেষক।