বইপত্র: আকাশ পট

চৈত্র, বৈশাখ ও আশ্বিন মাসে প্রচণ্ড গরম পড়ে। বৃষ্টিও তেমন হয় না বললেই চলে। ঘরে টেকা দায়। সন্ধ্যায় পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ছেলেমেয়েরা বসে পড়ে খোলা উঠানে। খেজুর পাতার পাটি বিছিয়ে। দখিনা বাতাস আসে ছলকে ছলকে। প্রাণ জুড়িয়ে যায়। সুয়োরানি-দুয়োরানি আর ডালিমকুমারের গল্পে জমে ওঠে আসর। কোথায় সেই রাক্ষসপুরি? কোথায় বন্দী রাজকুমারী? ওপরে খোলা আকাশ। মেঘমুক্ত। অনন্ত নক্ষত্রবীথি। চোখ চলে যায় সেদিকেই। রাক্ষসপুরি বোধ হয় অসীম আকাশের কোথাও লুকিয়ে আছে ঘাপটি মেরে। চাঁদ-তারাদের নিয়েও কি কম গল্প আছে! একই তারা নিয়ে একেক দেশে একেক গল্প। তারাদের নামও আলাদা। একই তারা কোনো দেশে দয়াময় দেবতা, কোনো দেশে আবার ভয়ংকর দানব। কালপুরুষ যখন আকাশের গায়ে ঝলমল করে, তখন হয়তো কোনো দেশ সবুজ ফসলে ভরে ওঠে। আবার একই সময়ে কোনো দেশ হয়তো তলিয়ে যায় বানের জলে, কোনো দেশ ভয়ংকর খরায় পুড়ে ছারখার। যে দেশ সবুজ ফসলে ভরে ওঠে, সেই দেশ হয়তো কালপুরুষ দয়াময় দেবতা হিসেবে গণ্য হয়। বন্যা কিংবা খরাকবলিত দেশগুলোতে কালপুরুষকে ভয়ংকর দানবরূপে দেখা হয়।

কেউ যদি মহাকাশবিজ্ঞানী হতে চায় কিংবা মহাকাশ নিয়ে কৌতূহলী হয়, তাহলে তাকে আকাশের তারা চিনতেই হবে। তারা চেনা ও তাদের সম্পর্কে জানার জন্য প্রাচীন জ্যোতির্বিদ্যা আজও কার্যকর পন্থা। সেই সঙ্গে যদি পেছনের গল্পগুলোও জানা থাকে, তাহলে তারা চেনা অনেক সহজ। এত এত পুরাণ কাহিনি গড়ে উঠেছে তারাদের নিয়ে, তার সবগুলো মনে রাখাও সম্ভব নয়। তবে ছোট্ট কোনো বইয়ে যদি সেসব গল্প সংক্ষেপে বলা হয়, সঙ্গে যদি তারাদের অবস্থান ও সময়কালের কথা, তাহলে তারা চেনা সহজ ও মজার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক সেই কাজটিই করেছিলেন জ্যোতির্বিদ মোহাম্মদ আবদুল জব্বার। জ্যোতির্বিদ্যার ওপর বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন তিনি। তার মধ্যে আকাশ পট বইটি অন্যতম। একই তারা কীভাবে একেক দেশে একেক গল্পের জন্ম দিয়েছে, সেই তারাকে কেন্দ্র করে কীভাবে সেসব দেশের জীবনযাত্রা গড়ে উঠেছে, তা সাবলীল ভাষায় লেখক বর্ণনা করেছেন আকাশ পট-এ।

কালপুরুষের গল্প দিয়ে শুরু হয়েছে বইটি। লেখক বলেছেন, পেগাসাস পাখায় ভর দিয়ে রাতদিন আকাশে বেড়ায়। তার কোনো ক্লান্তি নেই। বাতাসের ভেতর দিয়ে সে ঝড়ের বেগে চলাফেরা করত। পেগাসাসের পর একে একে রানি ক্যাসওপিয়া, রাজা সিফিয়াস, বন্দী রাজকন্যা অ্যান্ড্রোমিডা, মহাবীর পারসিয়াসের গল্প আমাদের নিয়ে যাবে পৌরাণিক গল্পের অবিশ্বাস্য জগতে। সঙ্গে সঙ্গে আকাশের গভীর থেকে গভীরে চোখ মেলে দেখতে শেখাবে। তারপর আমাদের সামনে এসে হাজির হবে রূপকথার পঙ্খিরাজ ঘোড়া। গ্রিকরা একে বলে পেগাসাস। একে একে জলদৈত্য সিটাস, একজোড়া কুকুর, বুটিসমণ্ডল আসবে তারাদের রূপ ধরে। এরপর দেখা দেবে মহাবীর হারকিউলিস। মকর, দক্ষিণ মীন, শ্রবিষ্ঠা মণ্ডল ধরা দেবে চোখের সামনে, বইয়ের পাতায়। দেবরাজ জিউসের বিখ্যাত প্রেমকাহিনি দিয়ে শেষ হবে বইটি।

আকাশ পট বইটিতে প্রচুর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি তারা কোন কোন চরিত্রের বেশ ধরে আকাশে অবস্থান করছে, সেসব চরিত্রের কল্পিত ছবি আছে। আছে জ্যামিতিক ঢঙে আঁকা ছবিও। এ ছাড়া তারার অবস্থান কোন জায়গায়, সেটা স্পষ্ট করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ম্যাপ।

সব মিলিয়ে আকাশকে দেখানো হয়েছে বিশাল এক ক্যানভাসে। প্রতিটি তারা সেই ক্যানভাসে একেকটা ছবি। কবিগুরুর কাছ থেকে ধার করে লেখক পুরো মহাকাশকে বলেছেন একটা পট। আকাশ পট। অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তারা ছবি হয়ে আঁকা সেই পটে। সেই ছবিগুলোর ভেতর থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি তারার বিবরণ ঠাঁই পেয়েছে এ বইতে।

আকাশ পট বইটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। স্পষ্ট ছাপা, উন্নত কাগজ আর মজবুত বাইন্ডিং—দীর্ঘদিন সংগ্রহে রাখার জন্য আদর্শ। ১৩৪ পৃষ্ঠার বইটির দাম ২০০ টাকা। পাওয়া যাবে দেশের প্রায় সব অভিজাত বুকস্টলে।

 লেখক:  মোহাম্মদ আবদুল জব্বার

প্রথম প্রকাশ: মে, ১৯৮৮

প্রকাশক: বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন