চন্দ্রধনু

অন্ধকার আকাশের দিগন্তজুড়ে সাদাটে ধনু। লোকে তাকে বলে চন্দ্রধনু। হ্যাঁ, গ্রীক দেবী আইরিস যে চন্দ্রধনুর পথ ধরে হেঁটে যেতেন, সে ধনুর কথাই বলছি।

চন্দ্রধনু কি শুধু লোককথা কিংবা পুরাণের পাতায়ই পড়ে আছে? বাস্তবে কি কখনো এর দেখা মেলে? এর উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ, চন্দ্রধনু রংধনুর মতই একটি স্বাভাবিক আলোকীয় ঘটনা। চন্দ্রধনু আমাদের জন্য খুব পরিচিত না হলেও, ক্যালিফোর্নিয়ার ইয়োসেমিটি ন্যাশনাল পার্ক, ভিক্টোরিয়া ফলস, কিংবা কাম্বারল্যান্ড ফলস স্টেট রিসোর্ট পার্কে প্রায়ই এটি দেখা যায়।

সূর্যের আলোয় আমরা যেমন রংধনু দেখি, সেই একই প্রক্রিয়ায় রাতে চাঁদের আলোয় চন্দ্রধনু তৈরি হয়। রংধনুর মত চন্দ্রধনু সচরাচর চোখে পড়ে না। রাতের আকাশ ও আবহাওয়ার বেশকিছু শর্ত ঐকতানে এলেই কেবল দেখা মেলে এই চন্দ্রধনুর।

বৃষ্টি হলে বাতাসে পানির কণা ভেসে বেড়ায়। বাতাসে ভাসমান পানির কণায় যখন ভরা পূর্ণিমার চাঁদের আলো এসে পড়ে, তখন প্রতিফলন, প্রতিসরণ এবং বিচ্ছুরণের মাধ্যমে তৈরি হয় চন্দ্রধনু বা মুনবো। এই ধনু দেখতে হলে আকাশ হতে হবে কুচকুচে কালো, আর চাঁদ থাকবে একদম দিগন্তরেখার কাছাকাছি। তবেই চাঁদের বিপরীত প্রান্ত সাদাটে রঙ এর চন্দ্রধনু আমাদের চোখে পড়বে। উজ্জ্বল আকাশে চন্দ্রধনু তৈরি হলেও তা চোখে ধরা পড়বে না। কারণ যেকোনো ধরণের ঔজ্বল্য ম্লান চন্দ্রধনুকে আরও অনেক বেশি ম্লান আর ঝাপসা করে দিতে পারে।

প্রশ্ন জাগতে পারে যে, আলোর বিচ্ছুরন যেখানে হচ্ছে, সেখানে কেন আমরা সাদাটে ধনু দেখতে পাচ্ছি? কেন রঙধনুর মত বর্ণিল সাতরঙ্গা ধনু দেখা যায় না? এর কারণ চাঁদের গা থেকে প্রতিফলিত আলো স–র্যের আলোর তুলনায় অনেক বেশি ম্লান। এই ম্লান আলোতে যে রংধনু তৈরি হচ্ছে তা আমাদের খালি চোখে মলিন, ধূসর-সাদাটে লাগে। তবে লং এক্সপোজার ছবিতে চন্দ্রধনুর সাতরং সহজেই ধরা পড়ে। তাই খালি চোখে চন্দ্রধনুর আসল সৌন্দর্য অবলোকনের চাইতে লং এক্সপোজার ক্যামেরা অনেক বেশি কার্যকর।

সাধারণত এক পশলা বৃষ্টির পর আমরা সূর্যের আলোয় রংধনু দেখতে পাই। চন্দ্রধনু দেখতে পেতে যেসব শর্ত পূরণ করতে হয়, সেসব শর্তের অনেককিছুই বৃষ্টিস্নাত আকাশ না-ও পূরণ করতে পারে। এজন্য চন্দ্রধনু দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হল সেসব এলাকা, যেখানে জলপ্রপাত আছে।

জলপ্রপাতের জলধারা সবসময় বাতাসে পানি কণার স্তর তৈরি করে। এই স্তরে যখন দিগন্তর কাছে অবস্থানরত চাঁদের স্নিগ্ধ আলো এসে পড়ে, তখনই তৈরি হয় চন্দ্রধনু। জলপ্রপাতের ধারে চাঁদের বিপরীত দিকে মুখ করে দাঁড়ালে তখন চন্দ্রধনু দেখা যায়।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়