কাটা আপেল বাদামি হয় কেন

ভাবছেন, আপেলের লোহা বা আয়রন বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে মরিচা পড়ার মতো বিক্রিয়ায় বাদামি হয়? ইন্টারনেটে এমন ব্যাখ্যাই বেশি চোখে পড়বে। কিন্তু সত্যিটা হলো, আপেলের বাদামি হওয়ার জন্য লোহাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।

আপেল ছাড়াও কলা, পেয়ারা, নাশপাতি, আলু ইত্যাদি কেটে রাখলে বাদামি হয়ে যায়। এসব ফল বা সবজিতে প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৩-০.৮ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লোহা থাকে। মজার ব্যাপার হলো প্রক্রিয়াজাত করার আগে কাঁচা কফি বিনের রং সাদা বা হালকা সবুজ থাকে। সেটাকে কাটলে বা থেঁতলে দিলে ধীরে ধীরে বাদামি হয়ে যায়! অথচ কফিতে লোহার পরিমাণ শ–ন্য শতাংশ। লোহার জারণ বা অক্সিডেশন যদি এই বাদামি রঙের কারণ না হয়, তাহলে ঘটনাটা কী?

বেশির ভাগ উদ্ভিদকোষে পলিফেনল অক্সিডেজ (প্রাণিকোষের বেলায় টাইরোসিনেজ) নামে এনজাইম থাকে। আর কোষের ভেতর থাকে ফেনল নামক এক জৈবযৌগের বিভিন্ন উপজাত। এগুলো উদ্ভিদের বিভিন্ন বিপাকীয় বিক্রিয়ায় কাজে লাগে। কিন্তু উদ্ভিদকোষ ক্ষতিগ্রস@ হয়ে বাতাসের সংসপর্শে এলে পলিফেনল অক্সিডেজ এনজাইমের প্রভাবে কোষের ফেনলীয় যৌগগুলো অক্সিজেনে জারিত হয়। পাশাপাশি পরস্পর যুক্ত হয়ে পলিফেনল নামের পলিমার তৈরি করে। এ পলিমার থেকে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্রিয়ার কিছু ধাপ পেরিয়ে তৈরি হয় মেলানিন। হ্যাঁ! ঠিকই পড়েছেন—মেলানিন। যে মেলানিনকে ত্বক থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে আপনাকে আরও ফরসা বানানোর জন্য যাবতীয় সাবান, বিউটি ক্রিম আর ফেসওয়াশ কোম্পানি দিনরাত গলাবাজি করে যাচ্ছে—সেই মেলানিন। কাটা আপেলের বাদামি রংটিও মেলানিনে তৈরি।

পলিফেনলের বিক্রিয়াটি উদ্ভিদের সুরক্ষা দেয়। মেলানিন স্তর পানিরোধী। তাই ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দিয়ে কোষের পানি বাষ্পীভূত হওয়া কমায়। এতে কোষগুলো শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়। এটি রোগজীবাণুর আক্রমণ থেকেও বাঁচায়।

উদ্ভিদ ছাড়াও বিভিন্ন প্রাণীতে মেলানিন থাকে।

এখানেও সুরক্ষা দেওয়াই তার প্রধান কাজ। যেমন: মেলানিন মানুষের ত্বককে স–র্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। পোকামাকড়ের শরীর থেকে পানি বাষ্পীভূত হওয়া ঠেকিয়ে তাকে পানিশূন্য হওয়ার হাত থেকে বাঁচায় মেলানিন। মেলানিন বিভিন্ন রকম হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর মেলানিনে ভিন্নতা থাকলেও সব মেলানিনই ফেনলের পলিমার থেকে উদ্ভূত। আর সবগুলোই বাদামি থেকে কালচে। এ লেখা পড়ে কেউ যেন মনে না করেন যে, আপেল খেলে ত্বকে মেলানিন বেড়ে কালো হয়ে যাবেন!

লেখক: গবেষক ও চিকিত্সক, বিএসএমএমইউ।