শব্দকাহন ১ : কোয়ারান্টাইন

কোয়ারান্টাইন

হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা রূপকথাটি বোধ হয় সবার পড়া। জার্মানির হ্যামিলিন শহরে একসময় জলজ্যান্ত এক আতঙ্কের নাম ছিল ইঁদুর। ছোট-বড়, মাঝারি ইঁদুরের উত্পাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল শহরটি। মধ্যযুগে শুধু ওই শহরটিই নয়, গোটা ইউরোপেই ইঁদুর ছিল সাক্ষাত্ আতঙ্কের নাম। কারণ ইউরোপে ইঁদুরের মাধ্যমেই কয়েক দফা ভয়াবহএ প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল। এতে কয়েক লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল।

১৩৪৭ সালে ইউরোপ ও ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় ইঁদুরের মাধ্যমে ভয়াবহ বুবোনিক প্লেগ প্রথম দফায় ছড়িয়ে পড়ে। অনেকের ধারণা, ব্ল্যাক সি বা কৃষ্ণসাগরের ওপর দিয়ে আসা বাণিজ্য জাহাজের মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে প্রথমে ইতালিতে এ রোগ এসেছিল। সে সময় ইতালির ভেনিসসহ বেশ কয়েকটি শহর ছিল ইউরোপের বাণিজ্যের দ্বার। কেউ কেউ বলেন, চীন থেকে জাহাজে চড়ে ইঁদুরের মাধ্যমে প্লেগ ইতালিতে এসেছিল। পরে রোগটি ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।

একসময় বোঝা গেল, ইঁদুরের কারণেই রোগটি হচ্ছে। আর এর পেছনে রয়েছে বাণিজ্য জাহাজ। এরপর ইতালির শাসকরা এক ডিক্রি জারি করেন। তাতে বাইরের দেশ থেকে আসা কোনো জাহাজ ৪০ দিন পার না হওয়া পর্যন্ত ইতালির কোনো বন্দরে ভিড়তে পারতো না। এই ৪০ দিন বন্দর থেকে বেশ দূরে জাহাজগুলো অবস্থান করতে হতো। ইতালিয়ান ভাষায় ৪০ বোঝাতে কোয়ারাস্তা শব্দটি ব্যবহার করা হয়। লোকমুখে এ শব্দটি থেকেই পরবর্তী সময়ে উত্পত্তি হয় কোয়ারান্টাইন। সেই সঙ্গে অর্থেরও পরিবর্তন ঘটে যায়। বর্তমানে শব্দটির অর্থ হচ্ছে রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষ বা প্রাণীকে আলাদা রাখা বা আটকে রাখার ব্যবস্থা।