স্ট্রিং তত্ত্বের রহস্য জানালেন অশোক সেন

বিজ্ঞানচিন্তা-মেটাল তৃতীয় বিজ্ঞান বক্তৃতায় মহাবিশ্ব ও স্ট্রিং তত্ত্ব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন বিশ্ববরেণ্য তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও স্ট্রিং তত্ত্ববিদ অশোক সেন। ছবি: প্রথম আলো
বিজ্ঞানচিন্তা-মেটাল তৃতীয় বিজ্ঞান বক্তৃতায় মহাবিশ্ব ও স্ট্রিং তত্ত্ব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন বিশ্ববরেণ্য তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও স্ট্রিং তত্ত্ববিদ অশোক সেন। ছবি: প্রথম আলো

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৈরী আবহাওয়া। শৈত্যপ্রবাহের হিম-ঠান্ডা বাতাস ছলকে ছলকে এসে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছিল শরীরে। কিন্তু বিজ্ঞানপ্রেমীদের তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। স্কুল ও কলেজ-শিক্ষার্থী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- সব বয়সী মানুষ জড়ো হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে। বেলা ৩টায় সেখানে বসেছিল বিজ্ঞানের এক মিলনমেলা। ‌‘আমাদের মহাবিশ্ব: ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ পরিসরে এবং বিজ্ঞানে নোবেল ২০২০’ শিরোনামে সেখানে আয়োজিত হয় বিজ্ঞানচিন্তা-মেটাল তৃতীয় বিজ্ঞান বক্তৃতা। এই আয়োজনে প্রধান আলোচক ছিলেন বিশ্ববরেণ্য তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও স্ট্রিং তত্ত্ববিদ অশোক সেন।

অশোক সেন ভারতের হরিশচন্দ্র রিসার্চ সেন্টারের গবেষক ও অধ্যাপক। স্ট্রিং তত্ত্বে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১২ সালে পেয়েছেন ফান্ডামেন্টাল ফিজিকস পুরস্কার। যেটাকে ব্রেক থ্রু পুরস্কার নামেও ডাকা হয়। নোবেল পুরস্কারের পরে এটাই পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় পুরস্কার। ভারত সরকারের ‌‘পদ্মভূষণে’ ভূষিত এই বিজ্ঞানী রয়্যাল সোসাইটির সদস্য।

মহাবিশ্ব ও স্ট্রিং তত্ত্ব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন অধ্যাপক অশোক সেন। তিনি বলেন, ‌‘মহাবিশ্বের সার্বিক কাঠামো ব্যাখ্যা করতে, ব্ল্যাক হোলের রহস্য ভেদ করতে কিংবা পদার্থবিজ্ঞানের সার্বিক একটা তত্ত্বে পৌঁছাতে হলে কোয়ান্টাম মহাকর্ষ তত্ত্ব জরুরি হয়ে পড়েছে। এই তত্ত্ব ব্যাখ্যা করার জন্য অনেকগুলো তত্ত্বের জন্ম হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে সফল তত্ত্বটি হলো স্ট্রিং তত্ত্ব। পরীক্ষামূলক প্রমাণ পাওয়া না গেলেও এখনো পর্যন্ত মহাবিশ্বের প্রায় সকল অমীমাংসিত বিষয়গুলির তাত্ত্বিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে কেবল স্ট্রিং তত্ত্বই। তাই এই তত্ত্বই হতে চলেছে আগামী দিনের পদার্থবিজ্ঞানের মূল অনুষঙ্গ।’

আয়োজনে দর্শকদের জন্য ছিল বিশেষ কুইজ। কুইজে বিজয়ীদের সঙ্গে অতিথি ও আলোচকেরা। ছবি: প্রথম আলো
আয়োজনে দর্শকদের জন্য ছিল বিশেষ কুইজ। কুইজে বিজয়ীদের সঙ্গে অতিথি ও আলোচকেরা। ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক চিন্তা করা অত্যন্ত জরুরি। কেবল বিজ্ঞানমনস্কতার মাধ্যমে আমরা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি।’

এরপর ‘‌বিজ্ঞানে নোবেল ২০১৯’ বিষয়ক আলোচনা শুরু হয়। রসায়ন ও চিকিৎসায় ২০১৯ সালের নোবেল নিয়ে আলোচনা করেন যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নুরুজ্জামান খান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সৌমিত্র চক্রবর্তী। পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন। তিনি বলেন, ‌‘ভৌত বিশ্বতত্ত্বে তাত্ত্বিক অবদানের জন্য এ বছর নোবেল পান জিম পিবলস এবং এক্সোপ্লানেট আবিষ্কারের জন্য যৌথভাবে মিচেল মেয়র ও দিদিয়ের কুয়েলজ। তাঁদের এ নোবেল প্রাপ্তি অত্যন্ত যৌক্তিক। তবে পিবলসকে ভাগাভাগি করে না দিয়ে এককভাবে দিলেই তাঁর অবদানের যথার্থ মূল্যায়ন হতো।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আলোচক ও অতিথিরা। এ পর্বে উল্লিখিত আলোচকেরা ছাড়াও দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক সুমিত দাস, ভারতের টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের গবেষক প্রফেসর শ্রীরূপ রায় চৌধুরী এবং যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নাবিল ইকবাল।

এ ছাড়া দর্শকদের জন্য ছিল বিশেষ কুইজ। কুইজে বিজয়ী দশজনকে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় বিজ্ঞানের বই, বিজ্ঞানচিন্তার একটি করে কপি, বিজ্ঞানচিন্তার আগামী ছয় মাসের ফ্রি সাবস্ক্রিপশন। দেশের বৃহত্তম কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেটালের পৃষ্ঠপোষকতায় এই বিজ্ঞান বক্তৃতাটি আয়োজন করে মাসিক বিজ্ঞানচিন্তা।